একটি যুগের জীবনাবসান হল। তবে লতা মঙ্গেশকরের সারা ভারতের লতাদিদি একদিনে হয়ে ওঠেননি। প্রায় ৭০ বছরের পেশাদার সঙ্গীত জীবনে ২৭ হাজারের বেশি গানের রেকর্ডিং করেছিলেন তিনি। দেশের ৩৬টি ভাষা-সহ এবং বেশ কিছু বিদেশি ভাষাতেও গান রেকর্ড করেছেন তিনি। আজ এই কিংবদন্তি ভারতীয় তথা বিশ্ব নাগরিকের বিদায় লগ্নে দেখে নেওয়া যাক, তাঁর সম্পর্কে অবাক করা কয়েকটি তথ্য।
- লতা নয়, ভালো নাম ছিল হেমা: লতা মঙ্গেশকরের নাম কিন্তু ছিল হেমা। পরবর্তীকালে ওঁর বাবা দীননাথ মঙ্গেশকরের ‘ভাওবন্ধন’ নাটকের লতিকা চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ওঁর লতা নামটি রাখা হয়।
- কম বয়সে মেয়ের গানের প্রতিভা চোখে পড়ে বাবার: মঙ্গেশকর পরিবারের সকলেই কোনও না কোনও ভাবে শিল্পজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পন্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন ধ্রুপদী সঙ্গীত পিয়াসী। অভিনয়ের পাশাপাশি গায়ক হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। একবার তিনি এক ছাত্রকে একটি বিশেষ রাগ অনুশীলনের কথা বলেন। এদিকে ছাত্রটি অনুশীলন করছে। এর মধ্যেই ছোট্ট লতা তার ভুল ধরিয়ে দেয়। সেদিন বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর বুঝতে পারেন, তাঁর বড় মেয়ে গায়িকা হতে চলেছে। বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ছাড়াও লতা মঙ্গেশকর গানের তালিম নিয়েছিলেন আমানত খান, আমান আলী খানের মতো কিংবদন্তির কাছে।
- মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ডিং: ১৯৪২ সালে মরাঠি সিনেমা ‘কিটি হাসাল’-এর জন্য স্টুডিওতে গান রেকর্ডিং করেন লতা। কোনও অজ্ঞাত কারণে সিনেমাটি রিলিজ হলেও গানটি বাদ গিয়েছিল।
- অভিনেত্রী হিসাবেও হাতেখড়ি হয়েছিল: ১৯৪২ সালে বাবার মৃত্যু আর অর্থনীতিক সংকট মুশকিলে ফেলে দিয়েছিল মঙ্গেশকর পরিবারকে। কিছুটা অর্থের প্রয়োজনেই প্রায় ছ’বছর পেশাদার অভিনয় জীবনে আটটি সিনেমায় অভিনয় করেন পাঁচ ভাই বোনের সবচেয়ে বড় লতা মঙ্গেশকর। তবে অভিনয়ের কেরিয়ার সে রকম এগোয়নি।
- শুরুতে অনেকেই বলেছিলেন ‘বড্ড সরু গলা’: লতা মঙ্গেশকরের জীবনেও ব্যর্থতা এসেছিল। তাও কেরিয়ারের শুরুতেই। সেই সময় নুর জাহান, শাম সাদ বেগমের রমরমা সময়। একটু নাঁকি ভারি গলার চল তখন। অনেকেই বলেছিলেন, লতা মঙ্গেশকরের গলা বড্ড সরু। তবে ১৯৪৯ সালে ‘মহল’ সিনেমার সুপারহিট ‘আয়েগা অনেওয়ালা’ গানের পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ওঁকে।
- ১৯৬২ সালে তাঁর খাবারে বিষ মেশানো হয়েছিল: ১৯৬২ সালে লতা মঙ্গেশকর যখন গুরুতর অসুস্থ হন। তখন জানা যায়, ওঁকে স্লো পয়েজন করা হচ্ছিল। পরিস্থিতি এতটাই চিন্তার হয়ে দাঁড়ায়, ওঁকে প্রায় তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়। বিপদ কেটে গেলেও অনেক দিন লাগে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে।
- সাংসদ হিসেবে কোনও সুযোগ সুবিধা নেননি: লতা মঙ্গেশকরকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। অসুস্থতার জন্য তিনি রাজ্যসভার সেশনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। কিন্তু উনি এক টাকা বেতন বা বাড়ি ভাড়া বা কোনও বাড়তি সুবিধা নেননি, যা সাধারণত দেওয়া হয় সাংসদদের।