শেষ দলীপের প্রথম রাউন্ড, কেমন খেললেন পন্থ, রাহুলেরা, সুযোগ পাওয়ার দাবি জানিয়ে রাখলেন কারা?

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু হয়ে গিয়েছে। দলীপ ট্রফি দিয়ে শুরু হয়েছে এ বারের মরসুম। ভারতের প্রথম সারির ক্রিকেটারদের খেলানো হয়েছে এ বারের প্রতিযোগিতায়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ের আগে দলীপে ক্রিকেটারদের দেখে নিতে চাইছেন নির্বাচকেরা। চার দল মিলিয়ে ১৭ জন ক্রিকেটার ছিলেন যাঁরা দেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। দলীপের প্রথম রাউন্ডের শেষে দেখে নেওয়া যাক কে, কেমন খেললেন।

যশস্বী জয়সওয়াল: তরুণ ওপেনার ছিলেন ভারত বি দলে। তাঁর দল জিতলেও হতাশ করলেন যশস্বী। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাঁর সংগ্রহ ৩৯ রান। বেঙ্গালুরুর মাঠে তাঁর থেকে বড় রানের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ৩০ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। দুই ইনিংসেই তাঁর উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার খলিল আহমেদ।

শুভমন গিল: ভারতের শেষ টেস্ট সিরিজ়ে তিনি ছিলেন সহ-অধিনায়ক। ভারত এ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। কোচ গৌতম গম্ভীরের মতে শুভমন ভারতের হয়ে তিনটি ফরম্যাটেই সমান দক্ষতার সঙ্গে খেলার ক্ষমতা রাখেন। সেই শুভমনের দলীপে শুরুটা ভাল হল না। প্রথম ইনিংসে করেন ২৫ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ২১ রান। দু’বারই আউট হন পেসার নবদীপ সাইনির বলে। ইনিংসে শুরুটা ভাল করলেও বড় রান করতে ব্যর্থ শুভমন।

মায়াঙ্ক আগরওয়াল: এক সময় ভারতীয় দলের নিয়মিত ওপেনার ছিলেন মায়াঙ্ক। কিন্তু রোহিত শর্মা, যশস্বী, শুভমনেরা থাকায় এখন তাঁর সুযোগ পাওয়া মুশকিল। দলীপে শুভমনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ভারত এ দলের হয়ে ওপেন করেন মায়াঙ্ক। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাঁর সংগ্রহ ৩৯ রান। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৩৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ রান।

সরফরাজ় খান: ভারত বি দলের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করেন সরফরাজ়। প্রথম ইনিংসে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি। সেই ইনিংসে তাঁর ভাই মুশির খান ১৮১ রান করেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সরফরাজ় নিজের ছন্দে ফেরেন। ৩৬ বলে ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। তাঁর পাল্টা মারের সামনে কিছুটা গুটিয়ে যায় ভারত এ।

লোকেশ রাহুল: লাল বলের ক্রিকেটে এক সময় নিয়মিত সুযোগ পেলেও এখন একটু পিছিয়ে পড়েছেন রাহুল। আবার ভারতের হয়ে টেস্ট খেলতে মরিয়া তিনি। ভারত এ দলের হয়ে প্রথম ইনিংসে খেলেন ১১১টি বল। করেন ৩৭ রান। ক্রিজ়ে থিতু হতে সময় নিচ্ছিলেন। কিন্তু ক্রিজ়ে জমে যাওয়ার পর বড় রান করতে ব্যর্থ হলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১২১ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। দলকে জেতানোর আশা তৈরি করলেও ব্যর্থ হন রাহুল।

শ্রেয়স আয়ার: ভারত ডি দলের অধিনায়ক শ্রেয়স। প্রথম ইনিংসে ১৬ বলে ৯ রান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন শ্রেয়স। ৪৪ বলে ৫৪ রান করেন। দলীপে তিন নম্বরে ব্যাট করতে দেখা গেল তাঁকে। ভারতের হয়ে তিন নম্বর জায়গাটা পাবেন তো তিনি?

দেবদত্ত পাড়িক্কল: ভারতের হয়ে একটি টেস্ট খেলেছেন তিনি। লাল বলের ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে খেলেন পাড়িক্কল। প্রথম ইনিংসে কোনও রান করতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৬ রান করেন তিনি। আগামী দিনে ভারতীয় দলে জায়গা পেতে হলে ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে পাড়িক্কলকে।

রজত পাটিদার: ভারতের হয়ে তিনটি টেস্ট খেলা পাটিদার দলীপে খেলছেন ভারত সি দলের হয়ে। প্রথম ইনিংসে তিনি করেন ১৩ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৪৪ রান। দলকে জেতানোর নেপথ্যে ছিল তাঁর ব্যাট।

ঋষভ পন্থ: গাড়ি দুর্ঘটনার পর ক্রিকেটে ফিরলেও লাল বলের খেলায় প্রথম বার দেখা গেল তাঁকে। দলীপে ভারত বি দলের উইকেটরক্ষক ছিলেন তিনি। মনে করা হচ্ছে আসন্ন টেস্ট সিরিজ়ে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেন পন্থ। দলীপে তিনি প্রথম ইনিংসে ৭ রানের বেশি করতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ বলে ৬১ রান করেন। সরফরাজ়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে বড় রানের লিড নিতে সাহায্য করেন।

ধ্রুব জুরেল: দলীপে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির রেকর্ড ছুঁয়েছেন ধ্রুব। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে সাতটি আউটের নেপথ্যে ছিল তাঁর হাত। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে করেন ২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য।

শ্রীকর ভরত: পন্থের অবর্তমানে ভারতীয় দলের হয়ে উইকেটের পিছনে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কখনও সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। দলীপেও পারলেন না। প্রথম ইনিংসে করলেন ১৩ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬। পন্থ ফিরে আসায় ভরতের আবার টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন হয়ে গিয়েছে।

অক্ষর পটেল: তাঁর দল ভারত ডি হারলেও নজর কেড়েছেন অক্ষর। ৩০ বছরের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার প্রথম ইনিংসে ৮৬ রান করেন। ছ’টি ছক্কা মারেন তিনি। বল হাতে নেন দু’টি উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮ রান করেন অক্ষর। বল হাতে তুলে নেন একটি উইকেট। দলকে কিছুটা লড়াইয়ে রেখেছিলেন তিনিই।

ওয়াশিংটন সুন্দর: ভারতের হয়ে তাঁকে শেষ বার টেস্ট খেলতে দেখা গিয়েছিল ২০২১ সালের মার্চে। দলীপে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এই অলরাউন্ডারকে। কিন্তু ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে শূন্য এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। বল হাতে নিয়েছেন মাত্র একটি উইকেট। দেশের জার্সিতে লাল বলের ক্রিকেটে ফেরার জন্য যা যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।

কুলদীপ যাদব: বাঁহাতি স্পিনার দলীপে বল হাতে খুব বেশি উইকেট নিতে পারেননি। তাঁর বিরুদ্ধে তরুণ মুশিরকে খুব সহজ ভাবে খেলতে দেখা যায়। প্রথম ইনিংসে একটি মাত্র উইকেট নিয়েছিলেন কুলদীপ। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটই পাননি। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে করেন ১ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪ রান।

নবদীপ সাইনি: দলীপ ট্রফির প্রাথমিক দলে রাখাই হয়নি তাঁকে। মহম্মদ সিরাজ অসুস্থ থাকায় জায়গা করে নেন সাইনি। সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি ভারতীয় পেসার। ভারত বি দলের হয়ে প্রথম ইনিংসে ৫৬ রান করেন তিনি। এর পর বল হাতে নেন তিনটি উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে ১৯ বলে ১৩ রান করেন। সেই সঙ্গে তুলে নেন দু’টি উইকেট।

মুকেশ কুমার: বাংলার পেসার খেলছিলেন ভারত বি দলের হয়ে। দলের জয়ের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি। ভারত এ দলের বিরুদ্ধে পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন মুকেশ। প্রথম ইনিংসে তুলে নেন শিবম দুবে, কুলদীপ যাদব এবং অক্ষর পটেলের উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে আউট করেন লোকেশ রাহুল এবং তানুশ কোটিয়ানকে।

আকাশ দীপ: বাংলার অন্য পেসার আকাশ ছিলেন ভারত এ দলে। তিনি ভারতের হয়ে একটি টেস্ট খেলেছেন। দলীপের প্রথম ম্যাচে ব্যাটে, বলে সফল আকাশ। প্রথম ইনিংসে তিনি নেন ৪ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেন আকাশ। ব্যাট হাতেও সফল তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২ বলে ৪৩ রান করেন। রান আউট হয়ে যান আকাশ। দলকে জেতাতে না পারলেও নির্বাচকদের নজর অবশ্যই কেড়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.