ভূমিধসে বাড়িঘর ভেঙেছে, হারিয়েছে পরিচয়ও! ওয়ানেড়ের সর্বহারাদের জন্য চালু বিশেষ ক্যাম্প

এক রাতের মুষলধারে বৃষ্টি এবং ভূমিধসের জেরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল কেরলের ওয়েনাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে প্রাণের সন্ধান পেতে লাগাতার তল্লাশি চালিয়েছে উদ্ধারকারী দল। নামাতে হয় ভারতীয় সেনাকেও। অনেক মানুষের মৃত্যুর সাক্ষী থাকল এই ভূমিধস। সর্বসান্ত হাজার হাজার মানুষ। নিজেদের পরিচয় হারিয়েছে। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড হোক বা জন্মের শংসাপত্র মাটির নীচে। এমন সর্বহারা মানুষদের জন্য এ বার বিশেষ ক্যাম্পের বন্দোবস্ত করল জেলা প্রশাসন।

সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই ক্যাম্প। বেছে নেওয়া হয়েছে তিনটি স্কুলকে। মেপ্পাদি জেলার ওই স্কুলগুলিতে থাকছেন সরকারি আধিকারিকেরা। চুড়ালমালা, মুন্ডাক্কাই এবং মেপ্পাদির স্থানীয়দের জন্য ওই ক্যাম্পে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলা মানুষেরা ভিড় করছেন এই সব ক্যাম্পে। শুধু তা-ই নয়, ধসের কারণে নিখোঁজ মানুষদের খোঁজেও ক্যাম্পে আসছেন পরিজনেরা। ক্যাম্পগুলোর বাইরে ছবি থমথমে। সেখানকার মানুষদের চোখে মুখে শুধু সর্বসান্ত হয়ে পড়ার ছবি স্পষ্ট।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা ডিআর মেঘাশ্রী জানান, ধসের কারণে যে সব মানুষ তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের জন্যই এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের সাহায্যে সাধারণ মানুষের সুরাহার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রায় দু’সপ্তাহ অতিক্রান্ত। এখনও ধসকবলিত এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেনি। উদ্ধারকার্য প্রায় শেষ। আবার নতুন করে ওই সব এলাকায় বসতি তৈরির কাজ হবে। সরকারি হিসাবে ২২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে এই ধসের কারণে। ১৩০ জন নিখোঁজ। কিন্তু অন্যান্য নানা সূত্রে দাবি, মৃতের সংখ্যা ৪০০ পেরিয়েছে।

চালিয়ার নদীর উপত্যকা বরাবর এখনও প্রাণের সন্ধান চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। এই এলাকাই সবচেয়ে বেশি দুর্গম। সেখানে তল্লাশি চালানো সহজ নয়। হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা সেখানে পৌঁছছেন। আতিপাতি করে খুঁজছেন। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবনে খোঁজে তাঁরা।

সম্প্রতি ধ্বংসকবলিত এলাকা ঘুরে দেখে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আকাশপথে ঘুরে দেখেন ধসে বিপর্যস্ত ওয়েনাড়ের তিন গ্রাম চুড়ালমালা, মুন্ডাক্কাই এবং পুঞ্চিরিমত্তোম। কপ্টারে মোদীর সঙ্গে ছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, সে রাজ্যের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কেরলের বিজেপি সাংসদ সুরেশ গোপী। ধসের জেরে গৃহহীন হয়ে পড়া দশ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয় শিবিরে। সেই আশ্রয় শিবিরেও যান মোদী। তার পর এই বিপর্যয় এবং উদ্ধারকাজের বিষয়ে সবিস্তারে জানতে পর্যালোচনা বৈঠকেও বসেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.