পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২৭ মে: জায়গা নিয়ে বিরোধের জের, প্রতিবন্ধী আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের কুপিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। ঘটনায় রক্তাক্ত হয়েছে দুই মহিলা সহ পরিবারের মোট তিন সদস্য। যাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। বুধবার রাতে এই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় বালুরঘাটের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজুয়া এলাকায়। অসহায় ওই প্রতিবন্ধী পরিবারের উপর হামলার প্রতিবাদে তীর, ধনুক নিয়ে একজোট হন আদিবাসীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতেই এলাকায় ছুটে যেতে হয় বালুরঘাট থানার আইসি অরিন্দম মুখার্জি ও জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে’কে। যদিও পরে এলাকার বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা কিস্কু ও পুলিশের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি। মূল অভিযুক্ত অধীর মহন্ত ও তার ছেলে শ্যামল মন্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজুয়ার বাসিন্দা গণেশ বাস্কে তার স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে অত্যন্ত দূরবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন কাটান। তিনি নিজে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। মূলত স্ত্রীর রোজগার ও প্রতিবেশীদের উপর নির্ভর করে তাদের সংসার চলে। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাদের থাকার জায়গা নিজের বলে দাবি করে আসছিলেন প্রতিবেশী অধীর মহন্ত। বুধবার রাতে পরিবার নিয়ে যখন রান্না ও খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন গণেশ ঠিক সেই সময় মদ্যপ অবস্থায় অধীর ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে এলোপাথাড়িভাবে তাকে কোপাতে শুরু করে। অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন প্রতিবন্ধী গণেশ বাস্কে, ধারালো অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা পাননি স্ত্রী তালাময় মুর্মু এবং মেয়ে মনিকা বাস্কেও। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে তাদের। ঘটনার পরেই স্থানীয়রা ছুটে এসে তাদের বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে ওইদিন রাতেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তীর-ধনুক নিয়ে এলাকায় জমায়েত হন আদিবাসীরা। যে খবর পেতেই এলাকায় ছুটে যায় বিরাট পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতেই এলাকায় ছুটে যান বালুরঘাট থানার আইসি ও পুলিশ সুপার রাহুল দে। যদিও পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা কিস্কুর হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
কল্পনা কিস্কু জানিয়েছেন, প্রতিবেশীর ধারালো অস্ত্রের আক্রমণের শিকার হয়েছেন গণেশ বাস্কে ও তার পরিবার। যাকে ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। পুলিশ প্রশাসন ও তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।
প্রতিবেশী দুই বাসিন্দা পীযূষ কান্তি মিত্র এবং কবিরাজ কিস্কুরা জানিয়েছেন, হতদরিদ্র পরিবার গণেশের। প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে রয়েছেন তারা। কিন্তু তাদের সম্পত্তি নিজের বলে দাবি করে প্রতিবেশী অধীর মহন্ত। ওই জায়গা নিয়ে এর আগেও বহুবার ঝামেলা হয়েছে। ওইদিন রাতে তার বাড়িতে গিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে।
শ্যামল মহন্তের স্ত্রী সোনামনি মহন্ত জানিয়েছেন, জায়গা নিয়ে একটা বিবাদ তার বিয়ের পর থেকেই শুনে এসেছেন। ওইদিন প্রতিবেশীর বাড়িতে হামলা করেছে তার শ্বশুর। যে গন্ডগোলের ঘটনায় পুলিশ তার স্বামীকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।
বালুরঘাট থানার পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে মূল অভিযুক্ত পলাতক ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।