কসবায় শিক্ষকদের কর্মসূচিতে শুধু শিক্ষকেরা ছিলেন না। ছিলেন কিছু বহিরাগতও। ‘বাধ্য হয়ে হালকা বলপ্রয়োগের’ ব্যাখ্যার পর এ বার নতুন তত্ত্ব শোনাল কলকাতা পুলিশ। ভিডিয়ো দেখিয়ে তারা প্রমাণ করতে চাইল, পুলিশ শান্ত ভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল। বিক্ষোভকারীরাই প্রথমে পুলিশকে হেনস্থা করেছেন। পুলিশ কমিশনার (সিপি) মনোজ বর্মার মন্তব্য, ‘‘শিক্ষকেরাও যে পুলিশকে মারবেন, এটা আমরা আশা করিনি।’’
বুধবার জেলায় জেলায় ডিআই দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারারা। কসবার ডিআই দফতরেও জড়ো হয়েছিলেন অনেকে। তাঁরা চেয়েছিলেন স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দিতে। কিন্তু স্কুল পরিদর্শক দফতরে ছিলেন না। এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন চাকরিহারারা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় তাঁদের। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার ডট কম যাচাই করেনি)-য় দেখা গিয়েছে, এক বিক্ষোভকারীকে লাথি মারছেন এক পুলিশ আধিকারিক। পরে জানা যায়, ওই পুলিশ আধিকারিকের নাম রিটন দাস। তিনি কসবা থানার এসআই। সেই ভিডিয়ো নিয়ে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সেই বিতর্কের আবহে শুক্রবার সিপি মনোজ জানান, শিক্ষকদের কর্মসূচি ছিল বলে সেইমতোই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষকেরা সেখানে অশান্তি করবেন, হিংসাত্মক হয়ে পড়বেন, এটা তাঁরা আশা করেননি। সিপির কথায়, ‘‘শিক্ষকদের তালা লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু তালা লাগানো এবং তালা ভাঙা দুটো এক ব্যাপার নয়। শিক্ষকদের বিক্ষোভ। আপনি কী ভাববেন? ওখানে অশান্তি হবে, কেউ প্রত্যাশা করেনি।’’ ঘটনার সময় সেখানে বহিরাগতেরাও উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেছেন সিপি। তিনি বলেন, ‘‘ওরা (শিক্ষকেরা) ওখানে আসার পর আমরা বুঝতে পারি ওখানে বাইরের লোক রয়েছে। যে মুহূর্তে আমাদের কাছে খবর আসে, সেই মুহূর্তে সকলকে সতর্ক করা হয়েছিল।’’ পুলিশ জানিয়েছে, বহিরাগত কারা ছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সাংবাদিক বৈঠকে সিপির সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) রূপেশ কুমার। তাঁরও বক্তব্য, বিক্ষোভকারীরা জোরজবরদস্তি ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। ডিআই দফতরের মূল ফটকের সামনে গার্ডরেল বসানো হয়েছিল। তা ভাঙা হয়। তখনও পুলিশ শান্ত ভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিক্ষোভকারীরা ভিতরে প্রবেশের পর শেষ কোলাপসিবল গেটের কাছেও জমায়েত করে। ওই গেটও ভাঙার চেষ্টা হয়।
ভিডিয়ো দেখিয়ে রূপেশ দাবি করেন, ‘‘বেলা ১২.১৮ মিনিটে প্রথম ব্যারিকেড ভাঙা হয়। ভাঙা হয় তালাও। এর ১২.৩০ মিনিটে পুলিশকে হেনস্থা। তার আগে পুলিশ ফোর্স ব্যবহার করেছে, এ রকম কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুলিশ শান্ত ভাবে অনুরোধ করেছিল। পুলিশের ১৩ জন জখম হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা গেট টপকানোর সময় এক জন মহিলা পুলিশকর্মী চোট পেয়েছেন। তাঁর শরীরের উপর দিয়ে চলে গিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ভিডিয়ো শোনা গিয়েছে, ‘তালা ভাঙব’, ‘পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেব’। এত প্ররোচনার পরেই পুলিশ ফোর্স ব্যবহার করেছে।’’
তবে চাকরিহারা বিক্ষোভকারী শিক্ষককে লাথি মারা উচিত হয়নি শুক্রবারও মেনে নিলেন মনোজ। তাঁর কথায়, ‘‘লাথি মারা উচিত হয়নি। আগেও বলেছি, আজও বলছি। পুলিশের ভুল হতেই পারে। ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্যেও বলা হয় বারবার।’’ পাশাপাশিই সিপি জানালেন, কসবার ঘটনায় রিটনকেও হেনস্থা করা হয়েছে। তিনিও আঘাত পেয়েছেন। সিপি বলেন, ‘‘রিটনের বুকে লেগেছে। কানে চড় মারা হয়েছে। চশমা ভাঙা হয়েছে। আমি হেড হিসাবে বলছি, পুলিশকে কেউ হেনস্থা করবে আর… ভবিষ্যতে যাতে এ রকম না হয়, সেটা দেখা হচ্ছে।’’
রিটনকে কসবাকাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার করা নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তা নিয়েও মুখ খুলেছেন সিপি। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশে যিনি ডিউটি অফিসার, তিনি প্রথমে তদন্তকারী অফিসার হন। প্রয়োজনে পরে তাঁকে বদলানো হয়। এ ক্ষেত্রে রিটন দাস ডিউটি অফিসার ছিলেন। তাই তিনি তদন্তকারী অফিসার ছিলেন। তাঁকে তো বদলানো হয়েছে। এটা কলকাতা পুলিশে সাধারণ বিষয়।’’