ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens, Kolkata) মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রাজস্থান রয়্যালস (KKR vs RR, IPL 2024)। দিন দুয়েক আগে ঘরের মাঠে লখনউ সুপার সুপার জায়েন্টসকে (KKR vs LSG, IPL 2024) হারানো শ্রেয়স আইয়ার অ্যান্ড রাজস্থানকেও হারিয়ে ব্য়াক-টু-ব্য়াক জিততে পারত। তবে লিগের ‘সেকেন্ড বয়’কে নিজেদের জাত চিনিয়ে দিল ‘ফার্স্ট বয়’! কেকেআরের বিশ্বস্ত সৈনিক সুনীল নারিনের (Sunil Narine) প্রবল ঝড়ও মিলিয়ে গেল। জস বাটলারের (Jos Buttler) বিস্ফোরণে শেষে উড়েই গেল কেকেআর!
টস হেরে প্রথমে ব্য়াট করে কেকেআর স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ছয় উইকেটে ২২৩ রান। নারিন ঝড় ধেয়ে আসে ইডেনে। ৫৬ বলে ১০৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। ৮৯ মিনিটের তাণ্ডবলীলায় ১৩টি চার ও ছ’টি ছক্কা হাঁকালেন তিনি। ব্য়াট করলেন ১৯৪.৬৪-এর স্ট্রাইক রেটে। নারিন ২০১১ সাল থেকে খেলছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তবে তাঁর কেরিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন এদিন। তাও আবার নিজের ৩৫ বছর ৩২৬ দিন বয়সে। তিনি একজন বোলিং অলরাউন্ডার। ফলে সেঞ্চুরি সেভাবেও প্রত্য়াশিত নয়, তবে তিনি যে ব্য়াটটিও অসাধারণ করেন। কোনও দিন ক্রিকেটের কোনও ফরম্য়াটে তিন অঙ্কের রানের দেখা না পাওয়া নারিনের জন্য় ১৬ এপ্রিল তারিখটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নারিন সেঞ্চুরি করে শিশুর মতো উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন। ঠিক একই ভাবে স্ট্য়ান্ডে শাহরুথ খানও আনন্দে মেতে ওঠেন। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায় রাতারাতি।
নারিন ছাড়া আর কেকেআরের কোনও ব্য়াটারকে নিয়েই সেরকম বলার কিছু নেই। ওপেনার ফিল সল্ট এদিন ছাপ রাখতে পারেননি। ওপেন করতে নেমে তিনি ১৩ বলে ১০ রান করে আউট হয়ে যান। তিনে নেমে অঙ্গকৃষ রঘুবংশী বেশ ভালো খেলছিলেন নারিনের সঙ্গে। ১৮ বলে ঝোড়ো ৩০ রান করে ফেরেন তিনি। চারে নেমে শ্রেয়স (৭ বলে ১১) ও পাঁচে নেমে আন্দ্র রাসেল (১০ বলে ১৩) ব্য়র্থ হন। সাতে নামা ভেঙ্কটেশ আইয়ারও হতাশ করেন। ছয় বলে মাত্র আটটি রান করেন তিনি। তবে রিঙ্কু সিং ৯ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলে ছাপ রেখেছেন। এদিন আবেশ খান ও কুলদীপ সেন পেয়েছেন দু’টি করে উইকেট। এক উইকেট করে নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট ও যুজবেন্দ্র চাহাল।
ঘটনাচক্রে ২২৩ রান তাড়া করে জেতা জলভাত নয়, এর মধ্য়ে রাজস্থান শুরুটাও সেরকম করতে পারেনি। তারা দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে পাঁচ ওভারের মধ্য়ে। তখন স্কোরবোর্ডে উঠেছিল ৫৩ রান। ফিরে যান ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল (৯ বলে ১৯) ও অধিনায়ক সঞ্জু স্য়ামসন (৮ বলে ১২)। বৈভব অরোরার শিকার হন যশস্বী। হর্ষিত রানা ফেরান সঞ্জুকে। এরপর বাটলার একটি প্রান্ত ধরে রেখেছিলেন, কিন্তু কেকেআর বোলাররা বাটলারের সঙ্গে রিয়ান পরাগ ছাড়া আর কাউকেই পার্টনারশিপ গড়তে দেননি। রিয়ান ১৪ বলে ঝোড়ো ৩৪ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান। এরপর ধ্রুব জুরেল (২), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৮) ও শিমরন হেটমায়ার (০) আসেন আর ফিরে যান। ১৩ ওভারের মধ্য়ে ১২১ রানে রাজস্থান হারিয়ে ফেলে হাফ ডজন উইকেট।
শেষ চার ওভারে জয়ের জন্য় রাজস্থানের টার্গেট ছিল ৬২ রান। ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে কলকাতার বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল আটে ব্যাট করতে নামা রোভম্য়ান পাওয়েল। ১৩ বলে ২৬ রানের মারকাটারি ইনিংস খেলে রাজস্থানকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু নারিন তাঁকে এলবিডব্লিউ করে দিয়ে গ্য়ালারিকে ফের উচ্ছ্বাসে মাতান। তবে তখনও ভয় কাটেনি। কারণ বাটলার ছিলেন ক্রিজে। যাঁর পক্ষেও এই রান তাড়া করা সম্ভব ছিল। আর তিনি সেটাই করে দেখালেন। ৬০ বলে ১০৭ রানের (৯টি চার ও ৬টি ছয়) অপরাজিত ও অসাধারণ ইনিংস খেলে কেকেআরের মুখের গ্রাস কেড়ে নিলেন।