‘দিগন্ত টপকে যায় যে ভ্রমণ, গন্তব্য বিহীন তার মায়া…’ আর এই মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে রাখি বন্ধনের সকালে তাঁর ‘আনন্দের গান, দেখার বাগান’-এর উদ্দেশে পাড়ি। বাংলা গানের জগত তাঁকে চেনে ‘চাঁদের প্রেমিক’ নামে তিনি কিংশুক চট্টোপাধ্যায়। কোনও দিন ভাবিনি তাঁর চলে যাওয়া নিয়ে কিছু লিখতে হবে। বাংলা শব্দের সঙ্গে সকাল-বিকাল যাঁর ওঠা বসা একসময় ঈর্ষান্বিত করত, হ্যাঁ যে সাধনা তাঁর ছিল তা স্পর্শ করার মতো ক্ষমতা অনেকেরই নেই। অনেকটা সময় ধরে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখা। সে কেমন সেটা তাঁর কবিতাতেই সে বলেছে ‘ঘরের খাই আমি বনেও যাই, বনের পথে পথে মোষ চড়াই, দারুণ ঝর্ণায় ভিজিয়ে আলজিভ সন্ধে হব হব ঝিঁঝিঁ রা উদাসীন-জড়িয়ে ভরপুর খুশির ল্যাদ খাই’।
সালটা ২০০৫, বারাসাত গর্ভমেন্ট কলেজের ক্যান্টিনে টেবিল বাজিয়ে গান গাইছি, এমন সময় একমুখ দাঁড়ি ফাঙ্কি চেহারার এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন, ‘গানটা কার লেখা?’ প্রথমে পাত্তা দিইনি, সে আমার টেবিলের সামনে এসে বসল, তারপর বলল ‘গানটা নিজের লেখা হলে চল আমার সঙ্গে। এখানে গেয়ে লাভ নেই। বেচতে শেখ।’ খুব রাগ হয়েছিল। পরে সিগারেট অফার করে বলল, ‘আমি কিংশুক চট্টোপাধ্যায়। ও আমার বৌদিমণির কাগজওয়ালা গানটা আমার লেখা।’
এরপর কলেজের বাইরে কখনও মাসির চায়ের দোকানে তো কখনও হাটখোলার জুভেনাইল হোমের উল্টোদিকে কালুদার চায়ের দোকানের বেঞ্চে আড্ডা শুরু হল। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাবশিষ্য বলতেন নিজেকে। দিনযাপনও ছিল শক্তিরই মতো। একদিন সকালে সারা গায়ে কাদা মেখে ঠেকে এল, বললাম, ‘কী হয়েছে?’ বলল, ‘সারারাত কচু বাগানে পড়ে ছিলাম, চাঁদ খুঁজব বলে।’