“গ্রীষ্মের রাজা: আমের উপকারিতা ও ব্যবহারের দিকনির্দেশনা”

      আমের রসে সিক্ত প্রাণ,
      সবুজ পাতা, সোনালি তান।
       গ্রীষ্মের দিন, সুখের গান,
     সুবাসে যেন তারই  আহ্বান।

জাতীয় আম দিবস : প্রতি বছর ২২ জুলাই উদযাপন করা হয় একটি দিন যা আমাদের দেশের সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল আমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে উৎসর্গিত।”ফলসম্রাট ” (King of Tropical Fruits/Pride of India/Symbol of love) আম বাংলাদেশী সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যা ভারতের জাতীয় ফল । এটি শুধুমাত্র একটি ফল নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি প্রতীক।
আমের ইতিহাস খুবই পুরনো। এটি একটি প্রাচীন ফল যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাংলাদেশের মাটিতে বেড়ে উঠছে। ভারতীয় উপমহাদেশে আমের বিভিন্ন জাতের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে বাংলাদেশে এর প্রাধান্য আরও বেশি। আমাদের দেশের মাটি এবং জলবায়ু আমের জন্য আদর্শ, যা প্রতিটি মৌসুমে পাকা আমের গুণগত মান নিশ্চিত করে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: আম সাউথ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতে, ৪,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চাষ হচ্ছে এবং এটি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যে গভীরভাবে প্রোথিত। আমচাষের ইতিহাসে মোঘল আমলকে “Golden period ” বলা হয়। সম্রাট আকবর বিহারের দারভাঙ্গা অঞ্চলে 100000 আমগাছ লাগিয়েছিলেন যা লাখ-বাগ্ নামে খ্যাত।এটি এশিয়া, আফ্রিকা এবং পরবর্তীতে আমেরিকাতে বিস্তার লাভ করেছে অনুসন্ধান এবং বাণিজ্যের মাধ্যমে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি : আমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে আমের ফলন ও গুরুত্ব উদযাপন করতে শুরু করে। বিভিন্ন দেশ আম উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে থাকে, যা আমের বৈচিত্র্য এবং ব্যবহারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি আমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং এর বিভিন্ন রান্নার ঐতিহ্যের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্য রাখে।

প্রথম 1999 সালে দিনমুলাগ উৎসব যা জাম্বালেস ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল নামেও পরিচিত একটি বার্ষিক উৎসব যা ফিলিপাইনের জাম্বালেস প্রদেশের আমের প্রচুর ফলনকে উদযাপন করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়।জাম্বেলে চাষ করা আম বিশেষ করে দিনমুলাগ জাতের আমকে 1995 সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড দ্বারা বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি আম এবং 2013 সালে কৃষি বিভাগ দেশের সবচেয়ে মিষ্টি আম হিসেবে উল্লেখ করেছে ।ভারতে এই National Mango Festival শুরু হয় যখন National Horticulture Board of India, 1987 সালে সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের্ জাতীয় ফলের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করতে তথাপি সম্মান জানাতে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করবে।

এই দিনটি বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে উদযাপিত হয়, যার মধ্যে আমের স্বাদ গ্রহণের ইভেন্ট, আমের রেসিপি নিয়ে রান্নার প্রতিযোগিতা, এবং আমের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষামূলক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে,জাতীয় আম দিবসের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র আমের উপকারিতা এবং স্বাদ উদযাপন করি না, বরং আম চাষিদের পরিশ্রম এবং অবদানের প্রতিও সম্মান জানাই। আম চাষীরা তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং যত্নের মাধ্যমে এই ফল আমাদের টেবিল পর্যন্ত নিয়ে আসেন, এবং তাদের অবদান আমাদের জীবনে অনন্য গুরুত্ব বহন করে।

আমের সংস্কৃতিগত গুরুত্বও রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমের মৌসুম উদযাপন করা হয় উৎসবের মতো। আমের সঙ্গে যুক্ত নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন আমের আচার, আমসত্ত্ব, আমের রস,আমের মিষ্টি,আমের লস্যি ইত্যাদি আমাদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে।

এই দিনটিতে, আমাদের উচিত আমের গুরুত্ব এবং চাষিদের প্রচেষ্টাকে সম্মান জানানো। আম কেবল একটি ফল নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এছাড়া, এই দিনটি আমাদের কাছে আমের বহুমুখী ব্যবহার এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে অবগত করে। আম ভিটামিন এ, সি, এবং ফাইবারের ভালো উৎস যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গরমকাল আসলেই আমের উপস্থিতি আমাদের আনন্দিত করে তোলে, কারণ এটি একদিকে যেমন আমাদের রসনার তৃপ্তি প্রদান করে, তেমনি দেহের উষ্ণতা কমানোর কাজও করে।
আমের স্বাদ, রূপ এবং বৈশিষ্ট্য আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। গ্রীষ্মকালীন আম, যেমন হিমসাগর, ল্যাংড়া এবং ক্ষীরসাপাতি, আমাদের রসনার জন্য এক অনন্য আনন্দ নিয়ে আসে। এসব আমের মিষ্টতা, তাজা গন্ধ এবং মসৃণ টেক্সচার প্রতিটি মুখে আনন্দের স্পর্শ এনে দেয়।

জাতীয় আম দিবসে, আমরা এই সুস্বাদু ফলটির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আমের গুণ ও স্বাদকে যথাযথভাবে উদযাপন করি। আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আম আমাদের জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি এবং রসনাতৃপ্তি আনে।

এখানে কিছু বিখ্যাত আমের জাত এবং তাদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির বিবরণ দেওয়া হল :

  1. আলফানসো (Alphonso) – মহারাষ্ট্র (Maharashtra)
  2. দাশেরী(Dasheri) – উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh)
  3. ল্যাংরা(Langra) – উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh)
  4. চাপা(Chausa) – বিহার (Bihar)
  5. কেসার(Kesar) – গুজরাট (Gujarat)
  6. বাগানপল্লি (Banganapalli) – তেলঙ্গানা (Telangana)
  7. হিমসাগর(Himsagar) – পশ্চিমবঙ্গ(West Bengal)
  8. মহাশক্তি(Maha Shakti) – অন্ধ্র প্রদেশ (Andhra Pradesh) [ Here are ten popular mango varieties in India, listed below:
  9. আলফানসো (Alphonso)- Known for its sweetness and rich flavor.
  10. দাশেরহরি (Dasheri) – A sweet, aromatic variety from North India.
  11. লঙ্গড়া (Langra) – A variety known for its unique taste and texture.
  12. বাঙ্গানাপল্লী (Banginapalli) – A large, juicy mango from South India.
  13. হিমসাগর (Himsagar) – Known for its sweetness and smooth texture.
  14. চাপা (Chausa)- A popular mango with a distinctive flavor.
  15. বাগানপল্লি (Banganapalli)- A sweet and fibrous variety from the southern regions.
  16. মহাশখা (Maharashtra) – Known for its large size and sweetness.
  17. গোদুম্বা (Goddumba) – A variety known for its rich flavor and aroma.
  18. জববা (Jabda) – A lesser-known but delicious mango variety. These varieties are cherished for their unique flavors and are popular across different regions of India.]

সুস্মিতা সরকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.