খেলরত্ন বিতর্ক: শামির দৃষ্টান্তই ভরসা মনুর, যদিও পুরস্কার নিয়ে দুই মেরুতে পিতা এবং কন্যা

চলতি বছর ভারতের ক্রীড়াজগতে উল্লেখযোগ্য নাম মনু ভাকের। প্যারিস অলিম্পিক্সে ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে জোড়া ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি। মনুই একমাত্র ভারতীয় ক্রীড়াবিদ যিনি একটি অলিম্পিক্সে দু’টি পদক জিতেছেন। কিন্তু তার পরেও খেলরত্ন পুরস্কারের প্রাথমিক তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে মনুর। এই ঘটনায় শুরু হয়েছে বিতর্ক। তবে এখনও আশা শেষ হয়ে যায়নি। মহম্মদ শামির দৃষ্টান্ত ভরসা তাঁর। যদিও তার মাঝেই কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রককে নিশানা করেছেন মনুর পিতা রামকিষেণ ভাকের। তাঁর দাবি, কন্যাকে ক্রীড়াবিদ করে ভুল করেছেন তিনি।

বিতর্কের শুরু কী ভাবে?

ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পুরস্কার এই খেলরত্ন। প্রতি বছর দেশের সেরা ক্রীড়াবিদকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বার মনু দেশকে যা সম্মান এনে দিয়েছেন, তাতে এই পদকের যোগ্য তিনি। কিন্তু জানা গিয়েছে, খেলরত্নের যে প্রাথমিক তালিকা রয়েছে তাতে মনুর নাম নেই। তার পরেই শুরু হয় বিতর্ক। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, মনুর মতো সফল খেলোয়াড়ের নাম কেন তালিকায় থাকবে না।

মনুর দাবি, নাম জমা দিয়েছিলেন তিনি

মনু প্রথমে জানান, তাঁর নাম জমা দিয়েছিলেন তিনি। খেলরত্ন পুরস্কার পেতে ওয়েবসাইটে নাম নথিভুক্ত করতে হয় খেলোয়াড়দের। পরে সেখান থেকে কয়েক জনের নাম বেছে নেওয়া হয়। মনু দাবি করেন, নাম জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে প্রাথমিক তালিকায় নাম দেখতে পাননি।

ক্রীড়া মন্ত্রকের পাল্টা দাবি

মনুর এই দাবির পরে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক জানায়, আবেদনকারীদের তালিকায় মনুর নাম ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ভি সুব্রহ্মণ্যমের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খেলরত্নের জন্য তালিকা ঠিক করতে। সেই তালিকায় ভারতের হকি দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংহ, প্যারা-অ্যাথলিট প্রবীণ কুমারদের মতো খেলোয়াড়ের নাম থাকলেও মনুর নাম নেই।

ক্রীড়া মন্ত্রককে নিশানা মনুর পিতার

তালিকায় কন্যার নাম না-দেখে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রককে নিশানা করেন তাঁর পিতা রামকিষেণ। তিনি বলেন, “শুটিংয়ের মতো খেলায় ওকে দিয়ে ভুল করেছি। ওকে ক্রিকেটার তৈরি করা উচিত ছিল। তা হলে সব পুরস্কার, সব সম্মান ও পেত। একটা অলিম্পিক্সে মনু জোড়া পদক জিতেছে। ভারতে আর কার এই কীর্তি আছে? দেশের জন্য আমার সন্তান আর কী করবে? সরকারের উচিত ওর কীর্তিকে সম্মান জানানো।”

রামকিষেণ জানান, তিনি মনুর সঙ্গে কথা বলেছেন। এই ঘটনায় শুটার খুব দুঃখ পেয়েছেন। রামকিষেণ বলেন, “মনু বলেছে, ও নাম জমা দিয়েছিল। যদি সেটাই সত্যি হয়, তা হলে কমিটির উচিত ছিল ওর নাম নিয়ে ভাবা। শুটিং সংস্থারও উচিত মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলা। আমি মনুর সঙ্গে কথা বলেছি। ও আমাকে বলেছে, ‘আমার অলিম্পিক্সে যাওয়াই উচিত ছিল না। দেশের হয়ে পদক জেতাও উচিত ছিল না। সত্যি বলতে, আমার ক্রীড়াবিদ হওয়াও উচিত ছিল না।’”

সুরবদল মনুর

এই বিতর্কের মাঝে মনুর বক্তব্য কিছুটা বদলে যায়। তিনি জানান, হয়তো নাম জমা দিতে গিয়ে কোনও ভুল করেছেন তিনি। দেশের হয়ে পদক জেতাই তাঁর লক্ষ্য। পুরস্কারের লোভে তিনি ক্রীড়াবিদ হননি। সমাজমাধ্যমে মনু লেখেন, “ক্রীড়াবিদ হিসাবে আমার কাজ দেশের হয়ে পদক জেতা। পুরস্কার পেতে ভাল লাগে। পুরস্কার পেলে আরও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। কিন্তু ওটাই একমাত্র লক্ষ্য নয়। হতে পারে নাম জমা দেওয়ার সময় আমিই কিছু ভুল করেছিলাম। সেটা ঠিক করার কাজ চলছে। আমি পুরস্কার পাই, আর না-পাই, দেশের হয়ে পদক জেতার চেষ্টা চালিয়ে যাব। দয়া করে এই বিষয়ে বিতর্ক আর বাড়াবেন না।”

শামির দৃষ্টান্ত ভরসা মনুর

এই বিতর্কের মাঝেও খেলরত্ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে মনুর। গত বছর যে নিয়মে মহম্মদ শামি অর্জুন পুরস্কার পেয়েছিলেন, সেই নিয়ম মনুর ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে। গত বছর অর্জুন পুরস্কারের প্রাথমিক তালিকায় শামির নাম ছিল না। কিন্তু ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ক্রীড়া মন্ত্রকের কাছে অনুরোধ করে শামির নাম নথিভুক্ত করার জন্য। মন্ত্রকও শামির পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখার পর তাঁর নাম মনোনীত করেন। শামি পুরস্কার পান। জানা গিয়েছে, মনুর ক্ষেত্রেও এই বিতর্কের পর কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক তাঁর নাম নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এখনও খেলরত্নের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়নি। তাই মনুর নাম নথিভুক্ত করা অসম্ভব নয়। এখন দেখার, শামির পদ্ধতিতেই মনু খেলরত্ন পান কি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.