‘স্পর্শকাতর মামলা’। কামদুনিকাণ্ডের শুনানি এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎপ্রার্থী মৌসুমী, টুম্পারা।
১০ বছর পার। কামদুনিকাণ্ডে নিম্ন আদালতে যার ফাঁসি সাজা হয়েছিল, তাকে এবার বেকসুর খালাস করে দিয়েছে হাইকোর্ট! ফাঁসির বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাকি দু’জনকে। রেহাই পেয়ে গিয়েছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। কবে? চলতি বছরের ৯ অক্টোবর।
এদিকে হাইকোর্টের রায়কে চ্য়ালেঞ্জ করে যখন সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন (SLP) দাখিল করেছে রাজ্য়, তখন চুপ করে বসে নেই নির্যাতিতার পরিবারও। সুপ্রিম কোর্টের মামলা করেছেন তাঁরাও। এদিন শুনানি সেই দুটি মামলাকে যুক্ত করার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
কী প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলে? বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘এই যে জঘন্য় অপরাধ হয়েছিল কামদুনিতে। তার প্রতিবিধানের জন্য চেষ্টা, জন আন্দোলন হয়েছে। অনেকে চেষ্টাও করেছে। আমরাও সেই আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। প্রথমে তারা এই সরকারের উপর ভরসা করেছেন, তার পরিবারের লোকেরা চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যা হয়! ঠাণ্ডা হয়ে গেলে সরকার ভেবেছিল চুপ হয়ে যাবে। আমরা এখনও সঙ্গে আছি। আইন-আদালতের ব্য়াপার চলছে। আমরা নৈতিকভাবে সমর্থন করছি। আইনিভাবেও সমর্থন করছি ওদেরকে। সিদ্ধান্ত তাঁরাই নেবেন। অরাজনৈতিকভাবে তারা আন্দোলন করছিলেন’।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, ‘বিচারপতিদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ, অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিসের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের নির্দেশে, সেই তথ্য-প্রমাণ না দেওয়ার কারণে অভিযুক্তরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই কামদুনির মায়েরা, বোনেরা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে বাধ্য হয়েছেন’। সঙ্গে দাবি, ‘যে বিজেপি পার্টি, কামদুনির মা বোনেদের ভরসা দিয়েছিল যে, আপনাদের বিচারের ব্য়বস্থা করতে সহযোগিতা করব। তারা আর যোগাযোগ রাখে না’।
তৃণমূল নেতা অয়ন চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘কামদুনির প্রতিবাদীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আদালতে রাজ্য় সরকার লড়াই করেছিল বলেই নিম্ন আদালতে অপরাধীদের ফাঁসি সাদা পর্যন্ত হয়েছিল, যাবজ্জীবন হয়েছিল। পরবর্তীকালে যখন উচ্চ আদালতে গেল, জামিন পেয়ে গেল। মৌসুমীদেবী, টুম্পাদেবীরা, তাঁরা যখন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মিটিং করলেন, আমরা দেখলাম, অপরাধীদের হয়ে যিনি মামলা লড়লেন, তিনি এখনকার আরএসএসের এক কার্যকর্তা এবং তিনি ইডি-র আইনজীবী। প্রতিবাদটা ন্য়ায্য। কিন্তু বিজেপির রাজনৈতিক ফাঁদে তাঁরা পড়েছেন, সেই ফাঁদ থেকে যদি বেরোতে না পারেন, তাহলে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যাবে’।
ঘটনাটি ঠিক কী? রাজ্যে তখন সদ্য পালাবদল ঘটেছে। প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ২০১৩ সালের ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রথমে ধর্ষণ, তারপর খুন করা হয় এক ছাত্রী।সেই ঘটনার কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্যে। দোষীদের চরম সাজার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন।
অভিযুক্ত ছিল মোট ৯ জন। কিন্তু নিম্ম আদালতে মামলা চলাকালীনই মৃত্যু এক অভিযুক্তের। বেকসুর খালাস পেয়ে যায় আরও ২ জন। কলকাতায় নগর দায়রা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয় বাকি ৬ জন। ৩ জনকে মৃত্য়ুদণ্ড, আর ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। এরপর মামলা গড়ায় হাইকোর্টে।