হরিশঙ্করের পরামর্শেই নেতাজির নামে কালকা মেল

(( নেতাজি এক্সপ্রেস` নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকল এক বাঙালির নাম ))

সালটা ১৯৪১। কলকাতায় এলগিন রোডে নিজের বাড়িতেই বন্দি সুভাষচন্দ্র বসু। ব্রিটিশ সরকারের কড়া নজর তাঁর উপর। এই সময়ে মেজদার পুত্র অতিপ্রিয় ভাইপো শিশিরকুমার বসুকে সুভাষ ডেকে পাঠালেন।।

এর পরই উধাও সুভাষ! কী হয়েছিল?

সকলের চোখে ধুলো দিয়ে এলআইসি এজেন্ট মৌলবি জিয়াউদ্দিন খান সেজে ভাইপো শিশিরের সঙ্গে ওয়ান্ডারার গাড়ি চড়ে গভীর রাতে সুভাষ (subhash chandra bose) বেরিয়ে পড়েছিলেন বাড়ি থেকে। গন্তব্য ধানবাদ। সুভাষ ছক কষেছিলেন, রাস্তায় পুলিস ধরলে ওষুধ কিংবা হাসপাতালের কথা বলে বেরিয়ে যাবেন। শিশিরের দাদা ড. অশোককুমার বসুর বাড়ি ধানবাদেই। ছদ্মবেশী সুভাষকে শিশির গাড়ি চালিয়ে সেখানেই নিয়ে যান। সারাদিন সুভাষ অশোকের বাড়িতে থেকে রাতে গোমো স্টেশনে পৌঁছন মৌলবীর ছদ্মবেশেই। সেখান থেকে কালকা মেলে ধরে তৎকালীন ভারতের অংশ পাকিস্তানের পেশোয়ারে পৌঁছন সুভাষ। সেখান থেকে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।নেতাজির (netaji) ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ভারতীয় রেল এই হাওড়া-দিল্লি কালকা মেলকে ‘নেতাজি এক্সপ্রেস’ করার কথা ঘোষণা করেছে।।

হঠাৎ কেন এটা ঘটল?

এর কিছু পূর্ব ইতিহাস আছে। চন্দননগরের বাসিন্দা পেশায় প্রাক্তন রেলকর্মী হরিশঙ্কর রায় একটি বই লিখেছিলেন– ‘নেতাজির রহস্য সন্ধানে’। সেই বইয়ের ৪৪ থেকে ৪৬ পাতায় কলকাতার বাড়ি থেকে ছদ্মবেশে পালানোর সেই ঘটনার বিবরণ আছে। সেখানে ‘কালকা মেলে’র উল্লেখ আছে। নেতাজির এই সফরসূত্রেই রেলের কাছে দীর্ঘদিন ধরে কালকা মেলের নাম নেতাজির নামে রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন হরিশঙ্কর।বিগত তিন বছরে দু’বার এই মর্মে রেল মন্ত্রকে চিঠিও পাঠান তিনি। চিঠিতে তিনি নিজের বইয়ের কথা উল্লেখ করে, কেন কালকা মেলকে নেতাজির নামে করা হবে, তার তাৎপর্যও ব্যাখ্যা করেন। গত সপ্তাহে পূর্ব রেলওয়ের হেড অফিস থেকে হরিশঙ্করের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে তাঁর কাছে তাঁর বইটি রেল মন্ত্রকে তথ্য হিসাবে পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয়। অনুমতি দেন হরিশঙ্কর। আর এর পরই কালকা মেলকে রেল মন্ত্রক ‘নেতাজি এক্সপ্রেস’ করেছে বলে জানা যায়। জানতে পেরে বেজায় খুশি হরিশঙ্কর। বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হরিশঙ্কর। ছাত্রজীবন থেকেই নেতাজিপ্রেমী। ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে তাঁর পরিবার কলকাতায় আসে। কলকাতাতেই পড়াশোনা। কলা বিভাগে স্নাতক হরিশঙ্কর। পরে হুগলির চন্দননগরের উত্তর পুরশ্রীতে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। সারাজীবন নেতাজিকে নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ২০০৭ সাল থেকে ‘নেতাজির রহস্য সন্ধানে’ শীর্ষক বইটির লেখা শুরু করেন হরিশঙ্কর। ২০১৬ সালে বইটি লেখা শেষ হয়। চেয়েছিলেন ‘কালকা মেলে’র নাম হোক ‘নেতাজি সুভাষ মেল’। রেলমন্ত্রক করেছে ‘নেতাজি এক্সপ্রেস’। তবে তাতে কোনও দুঃখ নেই তাঁর। কারণ, কালকার সঙ্গে নেতাজির নাম জুড়ে দেওয়াটাই উদ্দেশ্য ছিল হরিশঙ্করের। ৮০-র কোঠায় দাঁড়িয়ে সেই স্বপ্নপূরণ হল হরিশঙ্করের।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.