কালিয়াগঞ্জে ছাত্রী মৃত্যুকাণ্ডে সাসপেন্ড ৪ পুলিস অফিসার। কিশোরীর মৃতদেহ রাস্তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ওই ৪ পুলিস অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সাসপেন্ড হওয়া চারজনই এএসআই পদমর্যাদার অফিসার। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪ পুলিস অফিসারকে সাসপেন্ড করার কথা জানিয়েছেন রায়গঞ্জ পুলিস জেলার পুলিস সুপার মহম্মদ সানা আখতার। প্রসঙ্গত, কালিয়াগঞ্জে কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় গণধর্ষণের অভিযোগ করেছে পরিবার। অন্যদিকে এই ঘটনায় একটি ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ওই ছাত্রীর দেহটি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিস! যে প্রসঙ্গে পুলিস সুপার দাবি করেছিলেন, ‘সেই মুহূর্তের পরিস্থিতি অনুয়ায়ী পুলিস কাজ করেছে।’ পাশাপাশি, পুলিস সুপার আরও বলেছিলেন, ‘আমরা সমস্তরকমভাবে তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধ কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’ এরপরই এদিন ৪ এএসআই পদমর্যাদার অফিসারকে সাসপেন্ড করার কথা জানালেন পুলিস সুপার।
ওদিকে কালিয়াগঞ্জে কিশোরীর বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর কথা খারিজ করে দিয়েছেন NCPCR চেয়ারপারসন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো। বরং তিনি দাবি করেছেন, ওই নাবালিকাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁকে শোষণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেই তিনি এব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। কানুনগো বলেন,’৩ জন চিকিৎসকের সঙ্গেই কথা বলতে চেয়েছিলাম। ১ জন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিশোরীকে যৌন হেনস্থা করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। কিশোরীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে দিল্লিতে গিয়ে রিপোর্ট দেব।’ প্রসঙ্গত, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ছাত্রীর। কিন্তু সেই বিষক্রিয়ায় মৃত্য়ুর তত্ত্ব মানতে নারাজ কানুনগো। বরং ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন NCPCR চেয়ারপারসন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো।
বিষক্রিয়ায় ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাও। NCPCR চেয়ারপারসন প্রিয়াঙ্ক কানুনগোর সাফ কথা, মন্ত্রীর এই দাবি মিথ্যে। কারণ তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই মন্ত্রী শশী পাঁজা মন্তব্য করেছেন যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ছাত্রীর। পাশাপাশি, তাঁর অভিযোগ, প্রশাসন সহযোগিতা করেনি। প্রশাসন সহযোগিতা করলে ২৪ ঘণ্টা থাকতে হত না। তদন্তকারী অফিসাররা কেউ তাঁর ফোন ধরেননি। রবিবার সকালে কালিয়াগঞ্জে পৌঁছন জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্যরা। মৃত কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। এরপর এদিন সকালে সার্কিট হাউজে গিয়ে NCPCR চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উত্তর দিনাপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহাকুমাশাসক, SDPO ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।
এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কালিয়াগঞ্জ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে RAF নামায় পুলিস। ঘটনাস্থলে আসে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। পাশাপাশি আসে কেন্দ্রীয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। একইসঙ্গে চলে আসেন খোদ NCPCR চেয়ারপারসন প্রিয়াঙ্কা কানুনগোও। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে ওই ছাত্রীর পরিবার। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিষক্রিয়ার কথা মানতে নারাজ মৃত কিশোরীর পরিবার। প্রিয়াঙ্ক কানুনগোও কিশোরী মৃত্যুর ঘটনায় এদিন বিষক্রিয়ার তত্ত্ব খারিজ করে যৌন নির্যাতন তত্ত্বেই এদিন শিলমোহর দেন।