আদালত ছেড়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে পা রাখার কথা ঘোষণা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। আগস্ট মাসে তাঁর অবসরের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আগামিকাল মঙ্গলবার বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বিদায় নেওয়ার সময়ে সময় বলে গেলেন, একদিন তো যেতেই হতো।
সোমবার ছিল কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের শেষ দিন। তাঁর এজলাসে থাকা মামলা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের এজলাসে। সোমবার কোনও মামলা শোননেনি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যয়া। প্রয়োজনীয় কিছু নথিপত্রে সাক্ষার করে তিনি আদালত থেকে বেরিয়ে যান। তবে যাবার সময়ে বেশ আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।
মুখে এক চিলতে হাসি, থমথমে মুখ নিয়ে এজলাস ছাড়লেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। হাত নাড়লেন অন্যান্য বিচারপতি, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও সাংবাদিকদের দিকে। চোখে জল নিয়ে এক প্রবীণ মহিলা বিচারপতি বলে উঠলেন, ‘১৭ নম্বর কোর্ট আমাদের কাছে মন্দির। কেন চলে যাচ্ছেন?’। এক আইনজীবী বললেন, আজ আমাদের ডার্ক ডে। যাবেন না প্লিজ। মানুষ আপনার দিকে তাকিয়ে। এক বিচারপ্রার্থীর কথায়, আপনার জন্য আমার মেয়ে চিকিত্সা পাচ্ছে। অনেক উপকার পাচ্ছি।
ওইসব কথা শুনে ঘুরে ফিরে তাকাচ্ছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, ‘আজ নয় তো কাল চলে যেতেই হতো। চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমি আমার কাজ শেষ করেছি। আরও অনেককিছু করার আছে।’
বিচারপতি হিসেবে শেষ দিন হওয়ায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে জড়ো হয়েছিলেন অনেকে। কেউ আশীর্বাদ চাইলেন, কেউ আশীর্বাদ করলেন। জীবনের ২৯ বছর তাঁর কেটেছে আইনজীবী হিসেবে। শেষ পাঁচ বছর বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছেন অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়।
নিয়োগ দুর্নীতি-সহ একাধিক মামলায় কড়া রায় দিয়ে রাজ্য হইচই ফেলে দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অনেক বিতর্কেও জড়িয়েছেন। রাজ্যে বহু মানুষের মধ্যে এখন বেশ জনপ্রিয়। এহেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কেন আচমকা অবসরের আগেই পদ ছেড়ে যাচ্ছেন? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেব। তখন থেকেই পদত্যাগ কার্যকর হবে। এটাই সাংবিধানিক নিয়ম। তার পর সব প্রশ্ন জবাব দেব। মঙ্গলবার কোর্টে মাস্টরদা সূর্যসেনের মূর্তির নীচে বসব। প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক মহলের খবর, বিজেপির টিকিটে এবার লোকসভা ভোটে লড়াই করতে পারেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।