ধর্মতলায় অনশনমঞ্চে এ বার যোগ দিতে চলেছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালও। ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো এবং আশফাকউল্লা নাইয়া। দু’জনেই এক সঙ্গে অনশনে বসবেন, নাকি আপাতত এক জনই বসবেন, সেই নিয়ে আলোচনা চলছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে। আলোচনার পরেই নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছিলেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা কেউই আরজি কর হাসপাতালের নন। রবিবার রাতে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে আরজি কর। অনশনে বসার বিষয়ে আলোচনা করছেন আন্দোলনের পরিচিত মুখ অনিকেত এবং আশফাকউল্লা। অনিকেত আরজি করের পিজিটি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগে রয়েছেন তিনি। আশফাকউল্লা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগে পিজিটি তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
শনিবার যখন ছয় অনশনকারীর নাম ঘোষণা করা হয়, তখন থেকে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। প্রশ্ন ওঠে, আরজি কর হাসপাতালকে ঘিরে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, আমরণ অনশন শুরু হয়েছে, সেখানে সেই হাসপাতালের কেউ কেন অংশগ্রহণ করছেন না? এই প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিরোধের জল্পনাও উঠে এসেছিল। যদিও আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের মুখে জুনিয়র ডাক্তারেরা অন্য কথাই জানিয়েছিলেন। তাঁরা দাবি করেছিলেন, আরজি করের এই মুহূর্তের পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং এই সিদ্ধান্ত হয়েছে ঐক্যবদ্ধ ভাবেই।
শনিবার ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, স্নিগ্ধা হাজরা, তনয়া পাঁজা, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের পুলস্ত্য আচার্য। তখন আন্দোলনকারীদের তরফে বলা হয়, ‘‘শনিবার যাঁরা অনশনে বসলেন, তাঁদের মধ্যে আরজি করের কেউ নেই।’’ এর পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে যে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেখানে কেন সেই হাসপাতালের কেউ উপস্থিত নেই? তাতে জনমানসে যে ভুল বার্তা যেতে পারে, তা কি কেউ ভেবে দেখেননি? এমন প্রশ্নও উঠেছে যে, আরজি কর হাসপাতালের কেউ কি তবে আন্দোলনে বসতে রাজি নন?
জুনিয়র ডাক্তারেরা বার বার এই দাবি খারিজ করেছেন। তাঁদের দাবি, কারা অনশনে বসবেন, আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সর্বসম্মত ভাবেই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্যান জিবিতে সকলে মিলে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার তথা আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘সকলে মিলেই এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম অংশ থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে লড়াই। শনিবার তা নিয়ে আমাদের কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক চলছিল। আমরা আরজি করের আন্দোলনকারীরা সেখানেই ছিলাম। আমাদের হাসপাতালে থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সেই কারণে ধর্মতলায় থাকতে পারিনি। আসলে এই আন্দোলনের অনেকগুলি দিক রয়েছে। আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি।’’ রবিবার সন্ধ্যায় ধর্মতলার অনশন মঞ্চে যোগ দিচ্ছেন সেই অনিকেত। অনশনে আশফাকউল্লার যোগ দেওয়ার বিষয়েও চলছে আলোচনা।
তবে এ রকম যে একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, তা আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন অনিকেত। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘যা হচ্ছে, তাতে আমাদের সকলের সমর্থন রয়েছে। আমরা হয়তো এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি। তবে কে বলতে পারে, পরবর্তী সময়ে হয়তো আবার বৈঠকে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে! তখন হয়তো আমাদের অন্য কোনও ভূমিকায় দেখা যেতে পারে।’’ তার পরেই অনিকেত বিভাজনের জল্পনা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। সকলের সম্মতি ক্রমেই এই সিদ্ধান্ত।’’ এ বার অনশনে বসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু হয়েছে আলোচনা। সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই রবিবার রাতে অনশনের মঞ্চে যোগ দিচ্ছেন আরজি কর হাসপাতালের দুই জুনিয়র ডাক্তার।