‘সেতু বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বার করতে সময় লাগবে’, মোরবী গিয়ে বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

গুজরাতের মোরবীতে ঝুলন্ত সেতু ভেঙে পড়ার কারণ চিহ্নিত করতে সময় লাগবে। মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পরিদর্শন করতে গিয়ে এ কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারের কাজে যুক্ত এনডিআরএফ এবং সেনাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির খোঁজ নেন মোদী। হাসপাতালে গিয়ে সেতু দুর্ঘটনায় আহতদের সঙ্গেও কথা বলেন।

রবিবার সন্ধ্যায় মাচ্ছু নদীতে ঝুলন্ত সেতু ভেঙে আহত শতাধিক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সরকারি ভাবে এখনও বলা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা ১৩৬। সোমবার রাতে উদ্ধারের কাজ বন্ধ করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে মঙ্গলবার সকালে তা ফের চালু করা হয়। সূত্রের খবর, এখনও অনেকের খোঁজ না মেলার কারণেই এই সিদ্ধান্ত।

গান্ধীনগরের রাজভবনে মোরবী-কাণ্ড ও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মঙ্গলবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মোদী। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশপাশি মুখ্যসচিব এবং পুলিশ প্রধান হাজির ছিলেন বৈঠকে। সেখানে মোদী নিহত, আহত এবং নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের।

বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ওই বৈঠকে উদ্ধারের কাজ এবং তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়েও আলোচনা হয়। সরকারি সূত্রের খবর, তদন্তের প্রক্রিয়া যে সময়সাপেক্ষ হতে পারে, সে প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। চলতি মাসের গুজরাতে বিধানসভা ভোট প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি যাতে তদন্তে শ্লথতার অভিযোগ তুলে মাঠে নামতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যেই মোদী ‘সময় চেয়ে নিলেন’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

বিধানসভা ভোটের আগে সোমবার দিন ভর গুজরাতে একের পর এক প্রকল্পের ঘোষণা, শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করেছিলেন মোদী। গুজরাতে হাজির থেকেও ঝুলন্ত সেতু-বিপর্যয়ের পর তাঁর মোরবীতে না যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। যদিও দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সোমবার মোদী বলেছিলেন, ‘‘খুবই যন্ত্রণাদায়ক ঘটনা।’’ জীবনে এমন দুঃখ কমই পেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রবিবার সন্ধ্যায় মোরবীতে মাচ্ছু নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা সরকারি ভাবে ১৩৬ বলা হলেও এখনও বেশ কিছু মানুষ নিখোঁজ। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংস্কারের জন্য দীর্ঘ ৭ মাস সেতুটি বন্ধ ছিল। গত ২৬ অক্টোবর তা খোলা হয়। তার পরেই এই দুর্ঘটনা। ইতিমধ্যেই সেতু দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। খোলার আগে সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে কোনও ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সেতু সংস্কারে কোনও অভিজ্ঞতা নেই, একটি সংস্থাকে টেন্ডার ছাড়া বরাত দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অন্য দিকে, মোদীর সফরের আগেই তড়িঘড়ি মোরবীর হাসপাতালে সংস্কার এবং রঙের প্রলেপ দেওয়ার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের তরফে সেই সব ছবি টুইটারে পোস্ট করে অভিযোগ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে এলে গোটা দেশের সামনে যাতে সেখানকার বেহাল দশা প্রকাশ না হয়ে পড়ে, তাই রাতারাতি রং করা হচ্ছে দেওয়াল, মেঝেতে বসানো হচ্ছে টাইলস। দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার রাজ্য জুড়ে শোক দিবস পালনের কথাও ঘোষণা করেছে গুজরাত সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.