শ্মশানের সংলগ্ন কালী মন্দিরের কাছেই এক নৈশ প্রহরীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় বাঁকুড়া শহরের উপকন্ঠে এক্তেশ্বর ব্রিজ এলাকায়। ঘটনাটি ঘটে রবিবার কালী পুজোর ভোরে বাঁকুড়া সদর থানার দ্বারকেশ্বর নদের তীরে পাতাকোলা শ্মশানের কাছেই। নাজিব উদ্দিন দালাল ওরফে নাজু (৫৪) নামে এক নৈশপ্রহরীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার বাড়ি বাঁকুড়া শহরের কেঠারডাঙ্গা মাঠ পাড়ায়। জানাগেছে, এই শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় একটি কালী মন্দির রয়েছে। পুজো কমিটির নির্দেশ মত নাজিব উদ্দিন পুজোর কয়েকটা দিন রাত পাহারার দায়িত্ব নেন।
মৃতের বড় ছেলে সাঁজু দালাল বলেন, তার বাবা নৈশ প্রহরীর কাজ করত ধলডাঙ্গার কাছে একটি মদের দোকানে। দুর্গাপুজোর সময় শহরের একটি মন্ডপেও নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করেছেন। শনিবার থেকে কালী পুজো উপলক্ষে এই পাতাকলা শ্মশান ঘাটের মন্দির সংলগ্ন জায়গায় মন্দির কমিটি তাকে রাত পাহারার কাজে নিযুক্ত করেন। সাঁজু দালাল বলেন, বাবা সকালেই বাড়ি ফিরবেন বলে যান কিন্তু বাড়ি না ফেরায় ফোন করি। ফোন বেজেই চলে। কিন্তু ফোন ধরছেন না দেখে তিনি শ্মশান সংলগ্ন কালী মন্দিরে এসে দেখেন তার রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। বড় রাস্তায় পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। তিনিই পুলিশকে খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন বলে জানান। কেঠারডাঙ্গার লোকজন এসে জড়ো হন মন্দিরের সামনে, তারা পুলিশকে মৃতদেহ তুলতে না দিয়ে বাঁকুড়া- বিষ্ণুপুর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাদের দাবি, খুনিকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে অবরোধ চলায় পুজোর দিনে জাতীয় সড়কে যান জটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ যাত্রীবাহী বাসগুলিকে ঘুরপথে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পুলিশ উপযুক্ত তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলে দীর্ঘ সময় পর অবরোধ ওঠে। এরপর পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তাদের প্রাথমিক অনুমান নাজিব উদ্দিনকে খুন করা হয়েছে। বাঁকুড়া সদর থানায় নাজিব উদ্দিন দালালের ছোটো ছেলে মহিমা দালাল তার বাবাকে খুন করা হয়েছে বলে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানাগেছে, শনিবার রাতে নাজিব উদ্দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মোটরবাইক নিয়ে। মন্দির সংলগ্ন জায়গায় তার বাইকটি রাখাও আছে। তার ছেলেদের বক্তব্য, তার বাবার সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল বলে তারা জানেন না। কিন্তু বাবা কেন খুন হলেন এবং কে বা কারা খুন করল অবিলম্বে পুলিশ তা খুঁজে বের না করলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। স্থানীয়দের দাবি, এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল। রাতের অন্ধকারে শ্মশানে অপরাধীরা ঘুরে বেড়ায়। তারাই সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নিয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ দর্জি জানান, একটা রহস্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।