মিঠুনে ‘মুকুল’ খুঁজছে কি বিজেপি? ‘জাত গোখরো’ কেন পদ্মে হঠাৎ এতখানি গুরুত্ব পাচ্ছেন?

তৃণমূল ছেড়ে মুকুল রায় যখন বিজেপিতে এসেছিলেন, তখন ঠিক যেমন কথা তাঁর মুখে শোনা যেত, এখন তেমনটাই অহরহ বলে চলেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। মুকুল বলতেন, খুব তাড়াতাড়ি দলবদলের জন্য বিজেপি দফতরের সামনে তৃণমূল বিধায়কদের লাইন লেগে যাবে। আর মিঠুন একেবারে সংখ্যা জানিয়ে বলছেন, কত জন তৃণমূল বিধায়ক বিজেপিতে আসার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন।

গেরুয়া শিবিরে আসার পরে ক্রমেই দলে গুরুত্ব বেড়েছিল মুকুলের। ঠিক ততটা না হলেও বিজেপিতে আসার পর মিঠুনের গুরুত্বও বাড়ছে বলে মনে করছেন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা। পুজোর মুখে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সফরসঙ্গী মিঠুন এখন রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির সদস্য। সে কমিটি তৈরি করেছেন স্বয়ং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। আর তাতে রাজ্যের প্রধান পদাধিকারী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পরেই মিঠুনের নাম! যা থেকেই স্পষ্ট, মিঠুনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সভাতেই তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মিঠুন যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। ‘জাত গোখরো’ ডায়লগ দিয়ে দলবদলের পরে ভোটের প্রচারে টানা অংশ নিয়েছেন। শুনিয়ে গিয়েছেন ‘এক ছোবলে ছবি’ করার হুঙ্কার। কিন্তু নবান্ন দখলের লড়াইয়ে ছোবল মারতে পারেনি বিজেপি। পরে দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য করা হলেও মিঠুন আর রাজ্যে রাজনীতি করতে আসেননি। গত জুলাই মাসে আচমকাই তিনি হাজির হন। রাজ্য দফতরে নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেন। তখন জল্পনা তৈরি হয়, সদ্য অবসর নেওয়া রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের জায়গায় মিঠুনকে কি রাজ্যসভায় পাঠাতে চায় বিজেপি? সে উত্তর এখনও মেলেনি। তবে মিঠুন যে ফের রাজনীতির ময়দানে নামতে চলেছেন, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট ছিল।

কিন্তু মিঠুন পুজোর মুখে রাজ্যে নতুন দাবি নিয়ে আবির্ভূত হন। সটান বুক ঠুকে বলেন, ‘‘৩৮ জন তৃণমূল বিধায়ক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। তার মধ্যে আমার সঙ্গে ডিরেক্টলি (সরাসরি) ২১ জন।’’ এই সংখ্যা কিসের হিসাবে? বিজেপি নেতৃত্ব জানেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আবার বলছি, আবার বলছি, আবার বলছি। ব্যাক সাপোর্ট না থাকলে আমি কোনও কথা বলি না।’’ কিন্তু তাঁদের নাম কী? মিঠুন বলেন, ‘‘তৃণমূলের সবাই চোর নন। যাঁরা ভাল তাঁদেরই একটা অংশ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’’ তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ তৃণমূল বিধায়ক এবং নেতাদের কোনও তালিকা কি নেতৃত্বকে দিয়েছেন? মিঠুনের জবাব, ‘‘এত স্পষ্ট করে বলব না। আমি প্রোটোকল মেনে কথা বলি। শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তাঁদের নির্দেশ আমি এখানে এসে এই কথা বলছি।’’

মিঠুনকে রাজ্যে কাজে লাগানোর নির্দেশ যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে আগেই এসেছে, তা গেরুয়া শিবিরের অনেকেই বলেছিলেন। এ বার কোর কমিটিতে মিঠুনকে রাখায় সেটা আরও স্পষ্ট। সুকান্তকে নড্ডা এমনও নির্দেশ দিয়েছেন যে, প্রতি মাসে অন্তত এক বার কোর কমিটির বৈঠক করতে হবে। বিজেপি শিবির সূত্রের খবর, খুব তাড়াতাড়ি রাজ্যে আসছেন মিঠুন। সেই সময় কোর কমিটির বৈঠক হবে কি না জানা না গেলেও মিঠুন রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় যেতে রাজনৈতিক সফরে পারেন।

কিন্তু কেন? মিঠুনকে দিয়ে তৃণমূল ভাঙানোর খেলাই কি খেলতে চাইছে বিজেপি? ঠিক যেমন চেয়েছিল মুকুলের মাধ্যমে? দলের মধ্যেই রয়েছে এমন প্রশ্ন। মুকুলের সঙ্গে যাঁরা বিজেপিতে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকে তো বটেই, মুকুলও তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। তিনি এখন শুধুই খাতায়কলমে বিজেপি বিধায়ক। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যস্থতায় যাঁরা বিজেপিতে এসেছিলেন, তাঁদেরও বড় অংশ পুরনো দলে ফিরে গিয়েছেন। মিঠুন কি ‘তৃতীয় বিকল্প’? না কি ‘নির্বিকল্প’?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.