অহমদাবাদে বৃষ্টি। পঞ্জাব কিংস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা গেল না। ইডেন থেকে আইপিএলের প্লে-অফ সরানো হয়েছিল বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে। রবিবার সেই বৃষ্টির জন্যই এখনও শুরু করা গেল না পঞ্জাব কিংস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ। উল্লেখ্য, রবিবার কলকাতায় সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি এবং রাতেও হচ্ছে না। এই প্রতিবেদন লেখার সময় প্রথম ইনিংস অনায়াসে শেষ হয়ে যেতে পারত। রবিবার অহমদাবাদে খেলা শুরু হল রাত ৯.৪৫ মিনিটে।
এ বারের আইপিএলের কোয়ালিফায়ার ২ এবং ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল ইডেনে। গত বার কলকাতা নাইট রাইডার্স ট্রফি জেতায় ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল কলকাতায়। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কারণে আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ছিল। প্রতিযোগিতা এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে যেতেই বদলে যায় সূচি। নতুন সূচি প্রকাশ হতেই দেখা যায় কোয়ালিফায়ার ২ এবং ফাইনাল ইডেন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অহমদাবাদে।
বোর্ডের তরফে বলা হয়েছিল কলকাতায় জুনের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণেই ইডেন থেকে কোয়ালিফায়ার ২ এবং ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অহমদাবাদে। কিন্তু তাতেও বৃষ্টি এড়ানো গেল না। এড়ানো গেল না রাজনীতির প্রশ্নও।
ইডেন থেকে আইপিএল ফাইনাল অহমদাবাদে সরানোর কারণ নিয়ে যদিও অন্য মতও ছিল। অনেকের মতে বৃষ্টি নয়, আসল কারণ রাজনীতি। আইপিএল ফাইনাল স্থানান্তরণের নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ রাজনীতির লড়াইও বড় ভূমিকা নিয়েছে। ভারত-পাক সংঘাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়ালেও মোদী-দিদির রাজনৈতিক সম্পর্ক সুবিদিত। সেই কারণেই সুযোগ পাওয়া মাত্রই আইপিএল ফাইনালের মতো ‘ইভেন্ট’ কলকাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অনেকের বক্তব্য। এর মধ্যে ‘অনুঘটক’ হিসেবে অনেকে অমিত-তনয় জয় শাহকেও দেখতে পাচ্ছেন। প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি জয় এখন আইসিসি-র চেয়ারম্যান। দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে অমিত শক্তিধর। সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে অহমদাবাদ নিয়ে। আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ যদি ইডেন থেকে সরাতেই হয়, তা হলে অহমদাবাদে কেন?
পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। রবিবার অহমদাবাদের বৃষ্টি দেখে আবার ক্ষোভ জানান তিনি। রবিবার রাতের দিকে এক বিবৃতিতে অরূপ বলেছেন, “আমি আগেই সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলাম, ইডেন থেকে প্লে-অফ এবং ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এ দিন এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। বিসিসিআই ও আইপিএলের গভর্নিং বডি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আবহাওয়াবিদ হয়ে বলেছিল এই সময়ে কলকাতায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই স্যাটেলাইট যে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয় নয়, রাজনৈতিক সংক্রান্ত বিষয়ে প্রভাবিত হয়ে এই রিপোর্ট দিয়েছিল তা পরিষ্কার। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা আইপিএলের প্লে অফ মাঠে বসে দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন।”
অরূপ এর আগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকে পাশে নিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন। সেখানেও তিনি রাজনীতির কথা বলেছিলেন। অরূপ বলেছিলেন, “রাজনৈতিক কারণে আইপিএলের প্লে-অফ ও ফাইনাল ইডেন থেকে সরানো হয়েছে (প্লে-অফ ম্যাচের নির্ধারিত দিন ১ জুন)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনীতি করছেন করুন, কিন্তু বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে সরানো হয়েছে। উনি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছেন। কারণ, বিসিসিআই বলছে আবহাওয়ার কারণে খেলা সরানো হয়েছে।”
ইডেনে খেলার আয়োজনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা যে কোনও অন্তরায় হতে পারে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন অরূপ। এই প্রসঙ্গে গ্রুপ পর্বের সাতটি ম্যাচের উদাহরণ টেনেছেন। অরূপ বলেছিলেন, “ইডেনে আইপিএলের সাতটা ম্যাচ হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটা ম্যাচে গড়ে ৬০-৬৫ হাজার দর্শক খেলা দেখেছেন। তা হলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।” অরূপের কথাকে সমর্থন করেছিলেন মনোজ। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, “ইডেনে সাতটা ম্যাচ হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সবাই ভাল ভাবে খেলা দেখেছেন। শুধুমাত্র রামনবমীর দিন নিরাপত্তার কারণে একটা ম্যাচ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। সেটাও কলকাতাতেই হয়েছে। কেউ আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অভিযোগ করেনি। সাতটা ম্যাচই ভাল ভাবে হয়েছে।”
অহমদাবাদের মাঠে নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও এর আগে প্রশ্ন উঠেছিল। অল্প বৃষ্টিতেই সেখানে মাঠের ক্ষতি হয়। ইডেনের মতো পুরো মাঠ ঠেকে ফেলার ব্যবস্থাও নেই অহমদাবাদে। তবুও বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখে ইডেন থেকে ম্যাচ সরানো হয়েছে, অথচ অহমদাবাদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখা হয়নি?
রবিবার অহমদাবাদে খুব বেশি দর্শকও হয়নি। ইডেনে যে কোনও ম্যাচেই ৪০-৪৫ হাজার দর্শক থাকে। আইপিএলের প্লে-অফ হলে সেই সংখ্যা ৬০ হাজার ছুলেও অবাক হওয়ার থাকত না। কিন্তু অহমদাবাদের মাঠ অনেকটাই ফাঁকা। যদিও সেই মাঠে ১ লক্ষ ১০ হাজার দর্শক ধরে। ফলে ৫০ হাজার দর্শক এলেও অর্ধেক মাঠ ফাঁকা দেখায়।