প্রতিবছর ৬ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ভূবৈচিত্র্য দিবস পালিত হয়। এই দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে ভূবৈচিত্র্য ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ভূবৈচিত্র্য বলতে বোঝায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, যেমন পাহাড়, নদী, মরুভূমি এবং তাদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী, যা ভূ-বিজ্ঞান এবং জীববিহীন প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিকে স্বীকৃতি দেয়। এই দিবসটি ২০২১ সালে ইউনেস্কোর দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছিল।
দিবসটির লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- Geodiversity-র বিভিন্ন দিক প্রচার করা
- যুবকদের ভূ-বিজ্ঞানী পেশায় আকৃষ্ট করা
- ২০৩০- এ Sustainable উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ভূবৈচিত্র্য বোঝা ও ব্যবহার করা ভূবৈচিত্র্যের অন্তর্ভুক্ত:
- খনিজ
- পাথর
- জীবাশ্ম
- মাটি
- অবরূপ
- ভূমিরূপ
- শীর্ষভূমি
- নদী ও হ্রদের মতো জলবিজ্ঞানগত বৈশিষ্ট্য
ভূবৈচিত্র্যের গুরুত্ব
ভূবৈচিত্র্য আমাদের পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষা করে এবং মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, গাছপালা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন তৈরি করে, যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, ভূবৈচিত্র্য আমাদের খাদ্য, পানি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সরবরাহ করে এবং আমাদের প্রাকৃতিক বিপদগুলি বোঝা ও পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করে।
বিশ্বব্যাপী সংকট
বর্তমান যুগে ভূবৈচিত্র্যের হুমকি বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, শিল্পায়ন, বন উজাড় এবং প্রজাতির অবলুপ্তি এই সংকটের মূল কারণ। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন যে, যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।
উদযাপন এবং সচেতনতা
আন্তর্জাতিক ভূবৈচিত্র্য দিবস পালন করে বিভিন্ন দেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন সংগঠন এই দিনটি উপলক্ষে সেমিনার, কর্মশালা ও বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজন করে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে প্রকৃতির প্রতি আরও যত্নশীল করে তোলা।
২০২৪ সালের থিম হল “অতীত সংরক্ষণ – ভবিষ্যৎ টিকিয়ে রাখা”।
আমাদের উচিৎ ভূবৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া:
- অভিযান এবং শিক্ষা: ভূবৈচিত্র্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন করা এবং শিক্ষা দেওয়া।
- প্রাকৃতিক অঞ্চল সংরক্ষণ: সংরক্ষিত এলাকা প্রতিষ্ঠা করে এবং সেগুলি রক্ষা করা।
- প্রযুক্তি ব্যবহার: ভূবৈচিত্র্য সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি তথা AI ও গবেষণার ব্যবহার।
- স্থায়ী উন্নয়ন: পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করা, যাতে প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
- সমষ্টিগত উদ্যোগ: স্থানীয় জনগণ, সরকার এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
এভাবে আমরা আমাদের ভূবৈচিত্র্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারব।ভূবৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। পরিবেশের প্রতি আমাদের সচেতনতা ও যত্ন বৃদ্ধি পেলে আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারব। আন্তর্জাতিক ভূবৈচিত্র্য দিবস আমাদের এই উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য একটি সুযোগ প্রদান করে। আসুন, আমরা সবাই মিলে পৃথিবীর এই অনন্য বৈচিত্র্যকে রক্ষা করি।
সুস্মিতা সরকার