৩-৩ গোলে শেষ হল ভারত-পাকিস্তান হকির লড়াই। মালয়েশিয়ায় সুলতান অফ জোহর কাপে দু’বার পিছিয়ে পড়েও এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ল ভারতের অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল। অবশেষে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলালেন কোনও ভারতীয় দলের খেলোয়াড়েরা। বোধোদয় হল বলাই যায়।
তিন বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত শুরুতেই চাপে পড়ে যায়। ম্যাচের ৫ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার পায় পাকিস্তান। অধিনায়ক হান্নান শাহিদের গোলে এগিয়ে যায় তারা। ভারতীয় দলের গোলরক্ষক প্রিন্স দীপ সিংহ সঠিক দিকে ঝাঁপিয়েও আটকাতে পারেননি। গোল পেয়ে আগ্রাসী হকি খেলতে শুরু করে পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-২১ দল। ১০ মিনিটের মাথায় ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়তে পারত ভারত। গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন সুফিয়ান খান। অল্পের জন্য বাইরে যায় তাঁর শট। প্রথম ১৫ মিনিটে একটিও পেনাল্টি কর্নার আদায় করতে পারেনি ভারত। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে আরও চাপ বাড়ে ভারতীয় দলের উপর। ফাউল করার জন্য আদ্রোহিত এক্কাকে হলুদ কার্ড দেখান আম্পায়ার। ১০ মিনিট ১০ জনে খেলতে হয় ভারতকে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে গোল করতে পারেনি কোনও দলই। প্রথমার্ধ শেষেও ০-১ গোলে পিছিয়ে থাকে ভারতীয় দল।
বিরতির পর দু’দলই আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। ৩৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে পাকিস্তান। পেনাল্টি কর্নার থেকে দলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন সুফিয়ান খান। খেলার রং বদলায় শেষ ১৭ মিনিটে। ৪৩ মিনিটে ভারতের হয়ে প্রথম গোল করেন আরাইজিৎ সিংহ হুন্ডাল। পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে ব্যবধান কমান তিনি। গোল পাওয়ার পর সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে ভারত। ৪৭ মিনিটে ফিল্ড গোল করে ভারতকে সমতায় ফেরান সৌরভ আনন্দ কুশওয়াহা। ৬ মিনিট পরেই ভারতকে এগিয়ে দেন মনমিত সিংহ। খেলার ৫৩ মিনিটের মাথায় দুরন্ত গতিতে পাকিস্তানের ‘ডি’র মধ্যে ঢুকে গিয়ে গোল করেন তিনি। ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। ভারতীয় দলের ১০ মিনিটের দ্রুতগতির খেলায় কিছুটা দিশেহারা হয়ে যায় পাকিস্তান। তবু হাল ছাড়েনি তারা। ৫৫ মিনিটের মাথায় পাকিস্তানের হয়ে তৃতীয় গোল করে সমতা সুফিয়ান। ৬ গোল করে তিনিই এখনও পর্যন্ত প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা।
তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ভারতীয় দল এখন পয়েন্ট টেবলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়ারও তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট। গোল পার্থক্য এগিয়ে রয়েছে অজিরা। তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে পাকিস্তান। তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে আয়োজক মালয়েশিয়া। গোল পার্থক্যে পাকিস্তানের থেকে পিছিয়ে তারা। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ব্রিটেন এবং নিউ জ়িল্যান্ড।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে গত এশিয়া কাপে সূর্যকমার যাদবেরা হাত মেলাননি সলমন আলি আঘাদের সঙ্গে। মহিলাদের বিশ্বকাপে হরমনপ্রীত কৌরেরাও এড়িয়ে গিয়েছেন ফতিমা সানাদের। তাই ক্রীড়প্রেমীদের নজর ছিল মঙ্গলবারের ভারত-পাকিস্তান হকি ম্যাচের দিকেও। ছোটদের হকির লড়াইয়ে অবশ্য সৌজন্যের অভাব হল না। জাতীয় সঙ্গীতের পর দু’দলের খেলোয়াড়েরা হাত মিলিয়েছেন (হাই ফাইভ)।
পাকিস্তানের আশঙ্কা ছিল, ভারতীয় খেলোয়াড়েরা তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাবেন না। পাকিস্তান হকি ফেডারেশন থেকে খেলোয়াড়দের বলেও দেওয়া হয়, ভারত হাত না মেলালে তাঁরা যেন মানসিক ভাবে তার জন্য প্রস্তুত থাকেন। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটেনি।