India vs Australia: সূর্যর প্রখর উত্তাপে পুড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া, অধিনায়ক বোঝালেন তিনিই বিশের বাদশা

 বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার ঠিক চারদিনের মধ্য়েই মাঠে নেমে পড়ল টিম ইন্ডিয়া। শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠতে পারে। যদিও একেবারে নব্যভারত খেলছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। সদ্য় বিশ্বকাপ খেলা দলের সিংহভাগ খেলোয়াড়ই বিশ্রামে। এমনকী হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও ব্রেকে। ভিভিএস লক্ষ্মণের কোচিংয়ে সূর্যকুমার যাদবের তরুণ তুর্কিরাই নির্বাচিত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চলতি পাঁচ ম্য়াচের টি-২০ সিরিজের জন্য়। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আজ প্রথম ম্য়াচ হয়ে গেল বিশাখাপত্তনমের ওয়াইএসআর স্টেডিয়ামে। শুরুতেই দুরন্ত জয় ছিনিয়ে নিল ভারত।

এদিন সূর্যকুমার যাদব টস জিতে ব্য়াটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ম্যাথিউ ওয়েডকে। আর শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়া ছিল একেবারে রণংদেহী মেজাজে। ভারতীয় বোলারদের ক্লাবস্তরে নামিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন দুই ওপেনার- স্টিভ স্মিথ ও ম্য়াথিউ শর্ট। দারুণ মেজাজে শুরু করেছিলেন তাঁরা। দেখেই মনে হচ্ছিল যে, এদিন তাঁরা যা খুশি করতে চলেছেন। কিন্তু ম্য়াথিউর ইনিংস শর্টই থাকে। লং হতে দেননি রবি বিষ্ণোই। একেবারে উইকেট টু উইকেট বল করে ক্লিন বোল্ড করে দেন বিষ্ণোই। ৪.৪ ওভারে অস্ট্রেলিয়া প্রথম উইকেট হারায় ৩১ রানের মাথায়। 

এরপর স্মিথের সঙ্গী হন জোশ ইংলিস। স্মিথ-ইংলিশ ভয়ংকর ব্য়াটিং করতে শুরু করেন। কোনও বোলারকেই তাঁরা রেয়াত করেননি। তাঁরা ৬৬ বলে ১৩০ রান যোগ করেন স্কোরবোর্ড। স্মিথ ৪১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে রানআউট হয়ে যান। আটটি চারে নিজের অর্ধ-শতরান সাজান স্মিথ। এই প্রথম দেশের জার্সিতে টি২০ ম্যাচে ওপেন করলেন তিনি। অজিদের ভাবনা ক্লিক করে গেল। তিনি যখন ফেরেন তখন অজিদের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৬১। ১৬ ওভারের শেষ বলে আউট হন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে অস্ট্রেলিয়ার যা রান তোলার তোলা হয়ে যায়। এরপর জোশ ফেরেন ৫০ বলে ১১০ রানে ঝোড়ো ইনিংস খেলে। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক শতরানের মুখ দেখেন সদ্য় দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা ব্যাটার। ১১টি চার ও ৮টি ছয় মারেন জোশ। ব্যাট করেন ২২০-র স্ট্রাইক রেটে। এরপর শেষের দিকে মার্কাস স্টোইনিস (৬ বলে ৭), টিম ডেভিড (১৩ বলে ১৯) জ্বলে ওঠেন। অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেটে, ২০ ওভারে তোলে ২০৮ রান তুলল।

বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভারতের যে শুরুটার প্রয়োজন ছিল সেটা হয়নি। তিন ওভারের মধ্য়ে ২২ রানে চলে যায় দুই উইকেট। ওপেন করতে নেমেছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। রুতুরাজ প্রথম ওভারেই রান আউট হয়ে যান। ৮ বলে ঝোড়ো ২১ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন জয়সওয়াল। ভালো ছন্দে ছিলেন তিনি। জোড়া চার ও ছক্কাও হাঁকানো হয়ে গিয়েছিল তাঁর। শর্টের বল মিউ অফের উপর দিয়ে তুলে খেলতে গিয়ে সোজ স্মিথের হাতে জমা পড়ে যান। দেশের জার্সিতে প্রথম টি২০ উইকেট পান শর্ট। দুই উইকেট হারিয়ে ভারত যে আঘাতটা পেয়েছিল, সেখানে মলম দেওয়ার কাজটা করেন ঈশান-সূর্য। ৬০ বলে ১১২ রান যোগ করেন তাঁরা। ঈশান ৩৯ বলে ৫৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেই ফেরেন। জোড়া চার ও পাঁচ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজিয়ে ছিলেন তিনি। ঈশান যখন ফেরেন তখন ভারতের স্কোর ৩ উইকেটে ছিল ১৩৪। চলছিল ১৩ ওভারের খেলা। এরপর তিলক বর্মা এসে ১০ বলে ১২ রান করে আউট হয়ে যান। মাঠে নামেন কেকেআরের নায়ক রিঙ্কু সিং।

সূর্য কোথাও বুঝিয়ে দেন যে, তিনি জিতিয়েই মাঠ ছাড়বেন আজ। হয়তো জিতিয়েও দিতেন। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। ৪২ বলে ৮০ রানে শেষ হয়ে যায় তাঁর অধিনায়কোচিত ইনিংস। জেসন বেহেরেনডর্ফের বল লং-অনে উড়িয়েই খেলেছিলেন। কিন্তু অ্যারন হার্ডি অসাধারণ ক্যাচে সূর্যকে ফিরিয়ে দেন। বিশ্বকাপে সেভাবে সূর্য ছিলেন নিস্প্রভই। কিন্তু ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন যে, বিশ ওভারের ফরম্যাটে তিনিই বাদশা। এখনও বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার। সূর্য যখন ফেরেন তখন ভারতের জেতার জন্য ১৪ বলে ১৫ রান প্রয়োজন ছিল। ক্রিজে আসেন অক্ষর প্য়াটেল। কিন্তু রিঙ্কুর যে এখনই ফিনিশার তকমা জুটে গিয়েছে। শেষ ছয় বলে ভারতের টার্গেট ছিল সাত রান। ন্যাথান এলিসের প্রথম বলেই মেরে দিলেন চার। অর্ধেক কাজ ওখানেই শেষ করে দিলেন। এরপর বাই রান হওয়ায় অক্ষর নেন স্ট্রাইক। ভারতের চার বলে দুই রান দরকার ছিল। কিন্তু অক্ষর শট বল চালিয়ে খেলতে গিয়ে, এলিসের হাতেই তুলে দেন ক্য়াচ। যে শট নেওয়ার কোনও দরকারই ছিল না। এরপর সমীকরণ দাঁড়ায় তিন বলে দুই। নামেন বিষ্ণোই। ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গল নিতে গিয়ে হয়ে যান রানআউট। তবে দৌড়ে রিঙ্কু চলে এসেছিলেন স্ট্রাইকে। ভারতের দরকার ছিল ২ বলে ২। ব্য়াট করতে আসেন অর্শদীপ। রিঙ্কু চালিয়ে খেলে সিঙ্গল নিয়ে টাই করে দেন। তবে দু’টি রান নেওয়ার চক্করে রানআউট হয়ে যান অর্শদীপ। ব্য়াক-টু-ব্যাক রানআউট। ভারতের শেষ বলে জেতার জন্য় টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় এক রান। ফিনিশার রিঙ্কু ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে জিতিয়ে দেন। কিন্তু নো বল হওয়ায় সেটি এক রান হিসেবেই গণ্য করা হয়। রিঙ্কু ঠান্ডা মাথায় আবারও কাজের কাজটা করে দিলেন। ১৪ বলে ২২ রানে থাকলেন অপরাজিত।

এদিন ভারতীয় বোলিং এবং ফিল্ডিং নিয়ে যত কম বলা যায় তত ভালো। হতশ্রী বোলিং ও কুৎসিত ফিল্ডিংয়ের যেন শো চলল। একাধিক ক্য়াচ মিস, রান আউট মিস। চোখে দেখা যায় না যা। খেলেয়াড়দের শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল না যে, তাঁরা দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। অধিনায়ক সূর্য-সহ সকলেই কেমন যেন ধুঁকছিলেন মাঠে। এদিন পাঁচ বোলরকে খেলাল ভারত। সকলেই চার ওভার করে বল করলেন। যেন রান দিতেই নেমেছিলেন মাঠে। অর্শদীপ সিং হজম করলেন ৪১ রান। প্রসিধ কৃষ্ণা দিলেন ৫০ রান। বিষ্ণোই সবার উপরে। ৫৪ রান হজম করলেন। অক্ষর প্য়াটেল তুলনামূলক কম। ৩২ রান আসে তাঁর চার ওভারে। তবে এই রান বন্যার মাঝেও বাংলার হয়ে খেলা বিহারি পেসার মুকেশ কুমার নজর কেড়েছেন। তিনি চার ওভারে দিয়েছেন ২৯ রান। আগামী রবিবার অর্থাৎ ২৬ নভেম্বর ভারত-অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচ খেলবে তিরুঅনন্তপুরমের গ্রিনফিল্ড আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.