আফগানিস্তানে বা ইরাকে যখন আমেরিকা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমেছিল, তখন ভারতের থেকে পাকিস্তানকে বেশি কাছে টেনে নিয়েছিল তারা। ঐতিহাসিক ভাবে আমেরিকা এমনিতে পাকিস্তান ঘেঁষা ছিল। তবে চিত্রটা বদলে যায় ২৬/১১-র মুম্বই হামলার পর। এমনই দাবি করছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক এড্রিয়ান লেভি এবং ক্যাথি স্কট-ক্লার্ক। এই দুই সাংবাদিক তাঁদের বই, ‘স্পাই স্টোরিজ- ইনসাইড দ্য সিক্রেট ওয়ার্ল্ড অফ দ্য র অ্যান্ড আইএসআই’-তে দাবি করেছেন যে আমেরিকাকে ভারতের কাছে আসতে বাধ্য হয়েছে।
বইয়ে দাবি করা হয় ২০০৮ সালে ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংকে মার্কিন এনএসএ আমন্ত্রণ করে ‘সিগনালস ইন্টেলিজেন্স সিনিয়র প্যাসিফিক’ বা SPAAC-এ যোগ দিতে। এই গোপন গেয়ন্দা গোষ্ঠীতে আমেরিকা ছাড়াও রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপোর এবং থাইল্যান্ড।
SPAAC-এর মাধ্যমে টেকনিকাল ইন্টেলিজেন্স আদান প্রদান করে দেশগুলি। বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত। বইতে দাবি করা হয়, ২০০৮ সালের পর থেকে এই গোষ্ঠীতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর অন্তর্ভুক্তির পর থেকে ভারতীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে পড়তে শুরু করে অন্য দেশের সংস্থাগুলি। এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই গোষ্ঠী মুসলিম কট্টরপন্থীদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালাতে শুরু করে।
SPAAC-এর মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা, তাদের বৃহত্তর নেটওয়ার্ককেও চিহ্নিত করার কাজ করা হয়। কে, কখন, কাকে ফোন করছে, এই সব তথ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে এই কাজ করা হয়। বইতে নিজের সূত্রকে উদ্ধৃত করে লেখকরা বলেন, ‘এক ‘র’ প্রধান জানান যে ২৬/১১-র তথ্য SPAAC-এর থেকে পেয়েছিল ভারত। তাছাড়া আরও ১৮টি বিশদ ‘ব্রিফ’ পাঠিয়ে মার্কিন সংস্থা সিআইএ জানিয়েছিল যে কতজন হামলাকারী আছে, কোথায় কোথায় হামলা চালানো হচ্ছে, ইত্যাদি।’
বইতে সাংবাদিকরা দাবি করছেন, ভৌগলিক কারণে পাকিস্তানের প্রয়োজনীয়তা ২০০১ সালে আমেরিকার কাছে বেশি ছিল। তবে ধীরে ধীরে পাকিস্তানের অর্থনীতি ধসে যায়, পাক সংস্থাগুলির অবস্থা ভঙ্গুর হয়। এদিকে চিন সুপারপাওয়ার রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বইতে লেখরা দাবি করছেন ২৬/১১ হামলার পর ধীরে ধীরে কংগ্রেস দেশকে স্বাভাবিকের পথে ফিরিয়ে আনে। পাশাপাশি কাশ্মীর জুড়ে ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক বিছিয়ে দেয়। সেই সময় মার্কিন ডলার এবং সৌদি অর্থের জোরে আইএসআই বিচ্ছিনতাবাদের পন্থা আপন করে নেয়। আইএসআই এই সময় ভরতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার লক্ষ্যে প্রযুক্তিও চেয়েছিল আমেরিকার কাছে। তবে ওয়াশিংটন তা দিতে অস্বীকার করলে পাকিস্তান ভারতের থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করে।