ভারত আগেও শান্তি চেয়েছে, ভবিষ্যতেও শান্তিই চাইবে ভারত। কিন্তু, চিনের হাবভাব দেখে যা মনে হচ্ছে, বেজিং মোটেও শান্তি চাইছে না। বৃহস্পতিবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বিবৃতির পর এমনটাই মনে হচ্ছে। এদিন রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, অরুণাচল প্রদেশের প্রায় ৯০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিজেদের বলে দাবি করেছে চিন। অর্থাৎ শুধুমাত্র লাদাখ নয়, চিনের আগ্রাসন এবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও। বেজিংকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এদিন জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষে ভারত। কিন্তু দেশের স্বার্থে যত বড় বা যত কড়া পদক্ষেপ নিতে হোক না, তা নিতে পিছপা হবে না নয়াদিল্লি। যে কোনও ধরনের সঙ্কট মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে ভারত।
‘ভারত-চিন সীমান্ত পরিস্থিতি’ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিবৃতি দেন রাজনাথ সিং। তিনি আবারও স্পষ্ট বার্তা দেন, যাবতীয় চুক্তি ও সমঝোতা উপেক্ষা করেই সীমান্তে আগ্রাসী মনোভাব নিয়েছে চিন। গালওয়ান সংঘর্ষ হোক বা গত ২৯-৩০ অগস্টের মধ্যবর্তী প্যাংগং সো লেকের দক্ষিণ তীরে চিনা সেনার আগ্রাসন, ভারত কোনও প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ করেনি বলে আগেই জানিয়েছিল বিদেশ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার সেই বিষয়টির উপর আবারও জোর দেন রাজনাথ। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আছে, সেগুলি যে অবজ্ঞা করা হচ্ছে, তা চিনের পদক্ষেপে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চিন সীমান্তে যে সৈন্য সমাবেশ করেছে, তা ১৯৯৩ এবং ১৯৯৬ সালের চুক্তির বিরোধী। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার শ্রদ্ধা করা এবং তা কঠোরভাবে মেনে চলা হল সীমান্তবর্তী এলাকায় শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখার মূল ভিত্তি।’
একইসঙ্গে চিনের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে রাজনাথ জানান, বিশ্বের কোনও দেশ ভারতীয় সেনার টহলদারির অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারবে না। যে এলাকাগুলিতে ঐতিহ্যগত ভারতের টহলদারির অধিকার আছে। তিনি বলেন, ‘টহলদারির ধরন আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে কেন সংঘাত হয়েছিল। টহলদারির ধরনে ঐতিহ্যগত এবং স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। বিশ্বের কোনও শক্তি আমাদের জওয়ানদের টহলদারি আটকাতে পারবে না। আমাদের জওয়ানরা যদি জীবন উৎসর্গ করেন, তাহলে এটাই হল সেই জীবন উৎসর্গের কারণ। টহলদারির ধরণে কোনও পরিবর্তন হবে না।’
এদিন রাজ্যসভায় রাজনাথ আরও বলেন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে অন্তত ৩৮,০০০ বর্গ কিমি এলাকা বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছে চিন। এর পাশাপাশি তথাকথিত ১৯৬৩-র চিন-পাকিস্তান বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৫১৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পাকিস্তান চিনকে দিয়েছে ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। রাজনাথের কথায়, অরুণাচল প্রদেশে ভারত-চিন বাউন্ডারির ইস্টার্ন সেক্টরে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৯০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিজেদের বলে দাবি করেছে চিন।