চাকাটা কি উল্টে যাচ্ছে? না-হলে যে-দেশের সঙ্গে আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক, যে-দেশের কারণে নাগাড়ে সীমান্ত-উত্তেজনা পোয়াতে হয় ভারতকে, সেই দেশের মুখেই তার প্রশংসা? হ্যাঁ, ঘটনা প্রায় তেমনই। চিনের মুখে ভারতের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা।
গত কয়েক বছর ধরে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ-সহ বিভিন্ন দ্বন্দ্বে বারবার জড়িয়েছে চিন। চিনের গণমাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং ভুয়ো আখ্যান তৈরির অভিযোগও রয়েছে। এহেন চিনের মুখেই ভারত এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালের প্রশংসা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি।
চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে, কয়েকদিন আগে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন সাংহাইয়ের ফুদান ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক ঝাং জিয়াডং। সেই লেখাটিতে তিনি ভারতের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। প্রশংসা করেছেন বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলের। ওই লেখাটিতে মোদীর আমলে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ভারতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
সে তো কেউ একজন কোনও একটা কাগজে বা পত্রিকায় এরকম লিখতেই পারেন। তাতে এক তী এসে গেল? এসে গেল, কারণ, চিন সরকার তথা চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অনুমোদন ছাড়া গ্লোবাল টাইমসে কিছুই ছাপা হয় না। তাই এই লেখাটিকে ভারতের বিষয়ে চিনের সরকারি বক্তব্য বলেই ধরা যেতে পারে। আর সেজন্যই এত হইচই।
লেখাটিতে চিন-ভারত সম্পর্কের এই নতুন মোড় নিয়ে ব্যাখ্যাও হাজির করেছেন লেখক। তিনি উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপারে, বিশেষ করে চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের মনোভাব বদলেছে। আগে, ভারত-চিন বাণিজ্যিক সম্পর্কের আলোচনায় ভারতীয় প্রতিনিধিরা চিন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে মূলত সেই দিকেই তাকিয়ে থাকতেন। কিন্তু এখন তাঁরাই ভারতের রফতানি সম্ভাবনার উপর বেশি করে জোর দিচ্ছেন। যেটা দুদেশের সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় মাপের ভিত্তি রচনা করছে।
লেখাটিতে এই মুহূর্তে বিশ্বের নতুন ভূ-রাজনৈতিক ফ্যাক্টরের বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। আর লেই প্রসঙ্গ ভারতের অত্যাশ্চর্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, বৈদেশিক সম্পর্ক, প্রশাসনিক সক্ষমতা– ইত্যাদির কথা তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই রূপান্তরিত, শক্তিশালী এবং দৃঢ় ভারত এই মুহূর্তের বিশ্বে এক নতুন ভূ-রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে!
সংশ্লিষ্ট মহল আগেও বলেছে — যেটা ঝাং জিয়াডংয়ের এই লেখাটিতেও বলা হয়েছে– মোদীর আমলে ভারত কৌশলগতভাবে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সে আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়ও।