বেসমেন্ট জুড়ে ‘বেআইনি কারবার’! দিল্লির ঘটনার পর ১৩টি কোচিং সেন্টার সিল করে দিল পুরসভা

দিল্লির রাজেন্দ্রনগরের কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে বৃষ্টির জল ঢুকে তিন আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যুর পর পদক্ষেপ করেছে পুরসভা। শহরের অন্তত ১৩টি কোচিং সেন্টার সিল করে দেওয়া হয়েছে। সব ক’টি ক্ষেত্রেই বেসমেন্টটিকে বেআইনি ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। কোচিং সেন্টারগুলিকে সিল করে দরজায় নোটিস সেঁটে দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। যে কোচিং সেন্টারে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি পুলিশ আগেই সিল করে দিয়েছিল। সেখানকার মালিক এবং কো-অর্ডিনেটরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরে দিল্লিতে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়ছে সেই বৃষ্টির জলে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সন্ধ্যায় কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে লাইব্রেরিতে গিয়েছিলেন অন্তত ৩০ জন পড়ুয়া। সাধারণত সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বেসমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হলেও সে দিন বৃষ্টির কারণে তা খোলা ছিল। আচমকা বেসমেন্টে হু হু করে বৃষ্টির জল ঢুকতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে জলে ভরে ওঠে লাইব্রেরি। পড়ুয়ারা দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এলেও অনেকেই সেখানে আটকে পড়েন। তাঁদের দড়ির মাধ্যমে উপরে টেনে তুলতে হয়। তিন জন পড়ুয়া উঠতে পারেননি। পরে তাঁদের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতেরা হলেন তানিয়া সোনি (২৫), শ্রেয়া যাদব (২৫) এবং নবীন ডেলভিন (২৮)।

১৩টি কোচিং সেন্টার সিল করার নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লি পুরসভার মেয়র শেলী ওবেরয়। নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘‘এই কোচিং সেন্টারগুলি বেআইনি ভাবে বেসমেন্ট ব্যবহার করছিল। এগুলি সিল করে কর্তৃপক্ষকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।’’

দিল্লির ওই কোচিং সেন্টারের বেসমেন্ট শুধুমাত্র গাড়ি পার্কিং এবং জিনিসপত্র রাখার গুদামঘর হিসাবে ব্যবহার করার অনুমতি ছিল বলে অভিযোগ। সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল লাইব্রেরি। এমনকি, একটি ঘরে ক্লাসও নেওয়া হত। বেসমেন্ট থেকে বেরোনোর জন্য একাধিক দরজা দরজা ছিল না। একটিমাত্র দরজার ব্যবস্থা ছিল সেখানে, যা নিয়মবিরুদ্ধ।

সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে মুখার্জিনগর এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে আগুন লেগে যাওয়ার পর এলাকার সব কোচিং সেন্টার খতিয়ে দেখেছিল প্রশাসন। সেই সময়ে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় রাজেন্দ্রনগরের ওই সেন্টারকেও শো-কজ় করা হয়েছিল। তার পর কিছু দিন আগে দমকলের কাছ থেকে কোচিং চালানোর প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেসমেন্টে গলদ থেকেই গিয়েছিল।

কোচিং সেন্টারের মালিক অভিষেক গুপ্ত এবং কো-অর্ডিনেটর দেশপাল সিংহকে গ্রেফতার করে রবিবারই আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁদের আপাতত ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে শনিবার রাত থেকে রাজেন্দ্রনগরের কোচিং সেন্টারের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.