এসএসসি-র দুর্নীতি প্রমাণ হলে বাতিল হতে পারে সম্পূর্ণ নিয়োগ, দুই সম্ভাবনা দেখছে আদালত

স্কুল সার্ভিস কমিশনে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা প্রমাণিত হলে অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের কী পরিণতি হবে? দু’টি বিকল্পের কথা জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চ এ বিষয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। তাতেই বলা হয়েছে, দুর্নীতি প্রমাণিত হলে বাতিল করা হতে পারে সম্পূর্ণ নিয়োগও।

এসএসসি মামলার শুনানি চলছে হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চে। বিচারপতি বসাকের পর্যবেক্ষণ, যদি সবটা অবৈধ বা বেআইনি হয় তা হলে যা পরিণতি হওয়ার সেটাই হবে। যদি দেখা যায় সত্যিই দুর্নীতি হয়েছে, তা হলে আমাদের কাছে দু’টি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, গোটা নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, নিয়োগের অংশবিশেষ বাতিল করা। তবে এখনও অনেক কিছু খতিয়ে দেখা বাকি আছে বলে জানান বিচারপতি।

বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র আদালতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জানান, কমিশনের কারা কারা এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তা প্রকাশ্যে আনা দরকার। উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটের মূল্যায়ন, ওএমআর স্ক্যান করার বরাত প্রসঙ্গে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনুক কমিশন। কারণ, টেন্ডার দেওয়ার প্রক্রিয়া কমিশনের দফতরেই হয়েছিল। এখন সেখান থেকে বলা হচ্ছে, সিবিআইয়ের রিপোর্টে নাম থাকা সংস্থার কথা তাদের জানা নেই। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এটা কি সম্ভব? এটা কি কোনও বিধিবদ্ধ সংস্থার কার্যপদ্ধতি হতে পারে? এই কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা কী?’’

এর পরেই বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘যদি কমিশনকে বিশ্বাস না করা যায়, তা হলে তো গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া উচিত। আপনারা বিতর্কিত চাকরিপ্রাপক এবং তাঁদের পরিবারের ১০ হাজার লোকের কথা বলছেন। কিন্তু যে ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁদের কথাও তো ভাবতে হবে।’’

উদাহরণ টানতে গিয়ে পচা আপেলের কথা বলেন বিচারপতি। আদালতের সওয়াল পর্ব নীচে উল্লেখ করা হল।

বিচারপতি বসাক: একটি পচা আপেল ঝুড়ির বাকি আপেলগুলিকেও নষ্ট করে দেয়।

আইনজীবী মিত্র: তা হলে সেই পচা আপেলটিকে খুঁজে বার করা দরকার।

বিচারপতি: সেটা কি বাস্তবে সম্ভব? আপনিই বলে দিন, কী পদ্ধতিতে সেটা সম্ভব?

বিচারপতি: কেউ যদি পিছনের দরজা দিয়ে চাকরি পায়, তার সঙ্গে কী করা উচিত?

আইনজীবী: আর যাঁরা এত বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে চাকরি করছেন, তাঁদের কী হবে?

বিচারপতি: আপনি বলছেন, যাঁদের নাম মেধাতালিকায় ছিল না তাঁদেরও রেখে দেওয়া উচিত?

বিচারপতি: আমরা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছি। পাঁচ বা দশ হাজার মানুষের ভবিষ্যতের চেয়ে দেশের ভবিষ্যৎ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অযোগ্য ব্যক্তিরা কী শেখাবেন?

বিচারপতি: শূন্যপদ ভরাতে হবে বলে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ করে দিতে হবে?

আইনজীবী: আইনত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত সকলকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.