‘মনে হয় হেরে যাচ্ছি’! যাদবপুরে মৃত ছাত্রের বাৎসরিক ক্রিয়া শেষে মন্তব্য করলেন বাবা

মুণ্ডিত মস্তক। পরনে সাদা ধুতি। সামনে বড় ছেলের ছবি। সামনে পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করছেন। ভেজা চোখে চোয়াল শক্ত করে বাবা মন্ত্র আউড়ে চলেছেন ছেলের আত্মার শান্তি কামনায়। কিছুটা দূরে পাথর হয়ে বসে রয়েছেন যাদবপুরকাণ্ডে মৃত ছাত্রের মা। সোমবার ছেলের বাৎসরিক পারলৌকিকক্রিয়া শেষে মৃতের বাবা বললেন, ‘‘শুধু অভিযুক্ত নয়, র‍্যাগিং ব্যবস্থারও ফাঁসি হোক।’’ আর মৃতের মা বলছেন, ‘‘ও বেঁচে থাকলে দেশের সম্পদ হত।’’

নদিয়া থেকে পড়তে এসেছিলেন কলকাতায়। চোখে অনেক স্বপ্ন। নতুন ক্লাস, নতুন শহর, নতুন বন্ধু। কিন্তু আচমকাই দুর্ঘটনা। ২০২৩ সালের ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের মেন হস্টেলের দ্বিতীয় তলার বারান্দার নীচে থেকে জখম এক ছাত্রকে উদ্ধার করা হয়। এক রাত চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় তাঁর। উঠে আসে র‌্যাগিং তত্ত্ব। তার পর একের পর এক ছাত্র এবং প্রাক্তনী গ্রেফতার হয়েছেন ওই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায়। সেই মামলা এখনও চলছে। সোমবার তিথি অনুযায়ী, যাদবপুরের মৃত ছাত্রের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হল। নবদ্বীপের একটি মঠে বৈষ্ণবীয় রীতি অনুযায়ী, তাঁর বাৎসরিক ক্রিয়া শেষ হয়। বাবা-মা ছাড়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই ছাত্রের পরিবার এবং পরিচিতদের কয়েক জন।

ছাত্রমৃত্যুর এক বছরে একাধিক প্রশ্ন তোলেন তাঁর বাবা-মা। ছেলের বাৎসরিক ক্রিয়া শেষে আনন্দবাজার অনলাইনকে তাঁর বাবা বলেন, “পরিণত চিন্তাধারা এবং অনেক প্রতিভা ছিল ওর। অকালে চলে যেতে হয়েছে ওকে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা অটুট আছে। তবে এ বার ধৈর্য হারাচ্ছি। মনে হচ্ছে, হেরে যাচ্ছি। তবে বিশ্বাস হারাইনি। অভিযুক্তেরা নিশ্চিত শাস্তি পাবে। শুধুমাত্র অভিযুক্তদের নয়, গোটা র‌্যাগিং ব্যবস্থার মৃত্যুদণ্ড চাই।’’ ছেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতিতে ডুব দেন মা। কান্নাধরা গলায় বলেন, ‘‘আমার ছেলে নিষ্পাপ। ও কখনও কোনও অপরাধ করতে পারে না। বেঁচে থাকলে দেশের সম্পদ হত। এ জন্যই হিংসা করে ওকে খুন করা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শেষ বারের মতো আমাকে বলেছিল, অনেক কথা আছে। তিন বার বলেছিল, ‘আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও ….’ আমরা সব জেনেও কিছু করতে পারিনি।’’

ওই ছাত্রের বাৎসরিক ক্রিয়া শেষ হয়েছে সবে। তখনই শুরু হল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। মৃত ছাত্রকে হারানোর যন্ত্রণার স্মৃতিতে এক বছর পরেও বৃষ্টির জলের সঙ্গে চোখের জল মিলেমিশে একাকার। যাদবপুরকাণ্ডে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে এসেছে, নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে ছাত্রের। রিপোর্টে উঠে আসে, ছাত্রের মাথার বাঁ দিকে চিড় ছিল। বাঁ দিকের পাঁজরের হাড়ও ভেঙে গিয়েছিল। ভেঙে গিয়েছিল কোমর। র‍্যাগিংয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্র এবং প্রাক্তনীকে। তাঁদের হেফাজতে রেখে বিচার প্রক্রিয়া চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.