‘ভারত আর রাশিয়াকে চিনের অন্ধকারে হারিয়ে ফেললাম’! হঠাৎ মোদী-পুতিন-জিনপিঙের ছবি দিয়ে কিসের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

গভীর এবং অন্ধকারতম চিনের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে ভারত আর রাশিয়া। শুক্রবার সমাজমাধ্যমের পোস্টে হঠাৎ এমনটাই দাবি করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করলেন। তিন দেশকে একসঙ্গে ভবিষ্যতের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। তাঁর এই পোস্ট ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে চিনে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়। আলাদা করে জিনপিং এবং পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মোদী। ভারতের সঙ্গে এই দুই দেশের সুসম্পর্কের বার্তা দেওয়া হয়। প্রথম থেকেই চিনের তিয়ানজিন শহরে এই তিন রাষ্ট্রপ্রধানের সাক্ষাৎকে কটাক্ষ করে আসছিলেন ট্রাম্প। শুক্রবার তিনি মোদী, পুতিন এবং জিনপিঙের ওই সম্মেলনের একটি ছবি পোস্ট করলেন। লিখলেন শুধু দু’টি লাইন, ‘‘মনে হচ্ছে, আমরা ভারত আর রাশিয়াকে গভীরতম, অন্ধকারতম চিনে হারিয়ে ফেলেছি। ওদের ভবিষ্যৎ দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ হোক, এই কামনা করি।’’

রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনার কারণে ভারতের উপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। দুই দেশের বাণিজ্য তাতে ধাক্কা খেয়েছে। ভারতের পণ্যে এখন মার্কিন শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। মার্কিন বাজারের বিকল্প হিসাবে ভারতের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছে চিন। বাণিজ্য নিয়ে এই সংঘাতের মধ্যেই ট্রাম্পের ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট। অনেকেই দাবি করছিলেন, শুল্ক নিয়ে আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তা সাময়িক। দুই দেশ শীঘ্রই সমঝোতায় আসবে। কিন্তু ট্রাম্পের এই পোস্টের পর তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, দাবি পর্যবেক্ষকদের একাংশের।

ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের তিক্ততার শুরু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই। তিনি দাবি করেন, আমেরিকার পণ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিপুল পরিমাণে শুল্ক নিয়ে থাকে ভারত। এ বার আমেরিকার পালা। শুধু ভারত নয়, একাধিক দেশের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। ভারতের উপর প্রথমে ২৭ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে আনা হয় ২৫ শতাংশে। কিন্তু এর পরেও ট্রাম্প থামেননি। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্যেও তিনি পরোক্ষে ভারতকে দায়ী করেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে মোকাবিলা করতে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম অনেক কমিয়ে দিয়েছিল রাশিয়া। সেই থেকে ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি বৃদ্ধি করে। সস্তায় রাশিয়ার তেল কেনার ফলে ভারতের বাজারে জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার ফলেই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পুতিনদের সুবিধা হচ্ছে। এতে রাশিয়া অর্থসাহায্য পাচ্ছে ভারতের কাছ থেকে। যদিও প্রথম থেকে এ বিষয়ে নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই ভারত বাণিজ্যনীতি স্থির করে। নয়াদিল্লি যেমন এই অবস্থানে অনড়, তেমন ওয়াশিংটনও শুল্কের প্রসঙ্গে অনড়। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হচ্ছে। তাতে আলাদা মাত্রা যোগ করছে রাশিয়া এবং চিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.