বাড়িভাড়া বাবদ ছ’মাসের টাকা বকেয়া। তা আদায় করে পরিবারের কাছে না-পাঠানো পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছেন না হরিয়ানার মেওয়াটের বাসিন্দা মৌলবি ইস্তিয়াক। ফরিদাবাদে তাঁর বাড়িই ভাড়া নিয়েছিলেন দিল্লিকাণ্ডে অভিযুক্ত চিকিৎসকেরা। সেখানে বিস্ফোরক মজুত করে রাখা হয়েছিল। তদন্তের স্বার্থে বাড়িওয়ালাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখন জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে রয়েছেন ইস্তিয়াক। তাঁকে জেরা করা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের জেরা নিয়ে তিনি আদৌ চিন্তিত নন। তাঁর মন পড়ে আছে বকেয়া ভাড়ার না পাওয়া অর্থে।
গত ১০ নভেম্বর সকালে হরিয়ানার ফরিদাবাদে তল্লাশি অভিযান চালায় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং হরিয়ানা পুলিশের যৌথ একটি দল। আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র। তৎক্ষণাৎ ওই বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কাশ্মীরে। সেখানে রাজ্য তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয় ইস্তিয়াককে। সেই থেকে নানা ভাবে নানা রকম জেরার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। একটাই দাবি করেছেন, মাস ছয়েক আগে চিকিৎসকেরা তাঁর কাছ থেকে ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। ২৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ার চুক্তি হয়েছিল। চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, ঘরে রাসায়নিক সার মজুত করে রাখা হবে। এর বেশি তিনি আর কিছুই বলতে পারেননি।
ইস্তিয়াকের দাবি, প্রথম থেকে এক বারও ভাড়া মেটাননি এই চিকিৎসকেরা। অনেক দিন ধরেই তিনি ভাড়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তাঁর অভাবের সংসারে টাকা প্রয়োজন। তদন্তকারীদের কাছে তাই বার বার তিনি অনুরোধ করছেন, বাড়ি ভাড়ার বকেয়া টাকা ধৃত চিকিৎসকদের কাছ থেকে আদায় করে তাঁকে এনে দেওয়া হোক। তিনি সেই টাকা হরিয়ানায় তাঁর পরিবারের কাছে পাঠাবেন।
কেউই পুলিশের সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। দিল্লির লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণ এবং কাশ্মীরের এই সমগ্র সন্ত্রাসবাদী মডিউলে ইস্তিয়াকের যোগ রয়েছে কি না, পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তাঁকে জেরা করা হচ্ছে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই তদন্তকারীদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, ‘‘আমার বাড়িভাড়ার টাকাটা কবে পাব?’’ টাকা পাবেন না আঁচ করে মাঝে মাঝে ফুঁপিয়েও উঠছেন ইস্তিয়াক।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, দিল্লিকাণ্ডে জঙ্গি সন্দেহে ধৃত চিকিৎসক মুজ়াম্মিল শাকিল গনাইয়ের সূত্র ধরে বাড়িওয়ালা ইস্তিয়াকের নাম উঠে এসেছিল। দাবি, গনাই এবং উমর নবি তাঁর সঙ্গে বাড়িভাড়ার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু ছ’মাস ধরে ভাড়া দেননি। উমর দিল্লিকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। লালকেল্লার সামনে যে সাদা হুন্ডাই আই২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে, তার চালকের আসনে ছিলেন তিনিই। বিস্ফোরণে ১৫ জন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তাঁরও মৃত্যু হয়েছে। একে সন্ত্রাসবাদী হামলার তকমা দিয়েছে ভারত সরকার।

