‘আয়না দেখাতে এসেছিলাম’! মুর্শিদাবাদের ঘরছাড়াদের নিয়ে ডিজির সঙ্গে বৈঠক সুকান্তদের

মুর্শিদাবাদের ১১ জন আক্রান্তকে নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অপর তিন বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, তাপস রায় এবং অর্জুন সিংহও গিয়েছিলেন ভবানী ভবনে। রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে বৈঠকের পরেও আশ্বস্ত হতে পারেননি সুকান্তেরা। ভবানী ভবনের বৈঠক শেষে জানালেন, ডিজি ঘরছাড়াদের অভিযোগের কথা শুনেছেন। তবে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু তাঁরা পাননি। সুকান্ত বলেন, “ডিজিকে আমরা যে যে প্রশ্ন করেছিলাম, তার যথাযথ উত্তর পেলাম না। উনি বলেছেন, আমরা আইন অনুসারে কাজ করব।”

ভবানী ভবন থেকে বেরিয়ে ঘরছাড়া মহিলাদের কয়েক জন দাবি করেন, বিএসএফ ছাড়া তাঁরা এলাকায় শান্তি ফেরার ব্যাপারে ভরসা রাখতে পারছেন না। সেই প্রসঙ্গ টেনে সুকান্ত বলেন, “বিএসএফ ছাড়া (আক্রান্তেরা) ভরসা করতে পারছেন না। আমরা ডিজিকে আয়নাটা দেখাতে এসেছিলাম।”

সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু অঞ্চলে। বর্তমানে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। শান্তি ফিরতে শুরু করেছে এলাকাগুলিতে। গত সপ্তাহে অশান্তির খবর পেতেই পদক্ষেপ করেছিল রাজ্য পুলিশ। ডিজি রাজীব নিজে গত শনিবার পৌঁছে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে। ঘুরে দেখেছেন অশান্তি কবলিত এলাকা। তবে সুকান্তদের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদে আক্রান্ত পরিবারগুলির সকলের সঙ্গে কথা বলেননি রাজীব। বিজেপির দাবি, এই ১১ জনও সেই তালিকাতেই রয়েছেন।

বুধবার বিকেলে ওই ১১ জনকে নিয়ে বিজেপির রাজ্য অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করেন সুকান্তেরা। বিজেপি দাবি করে, এই ১১ জন মুর্শিদাবাদের অশান্তি কবলিত এলাকা থেকে এসেছেন। তাঁরা আক্রান্ত এবং ঘরছাড়া বলে দাবি বিজেপির। পরে বিজেপির রাজ্য দফতর থেকেই ওই ১১ জন আক্রান্তকে নিয়ে ভবানী ভবনের উদ্দেশে রওনা দেন সুকান্ত, জগন্নাথ, তাপসেরা। তবে ওই সময়ে ভবানী ভবনে তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তাই ওই ১১ জনকে নিয়ে রাজ্য পুলিশের সদর দফতরের বাইরেই ধর্নায় বসে পড়েন তাঁরা। বস্তুত, ওই সময়ে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন সংক্রান্ত বিষয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন রাজীব।

পরে ডিজির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে পুলিশের তরফে আশ্বস্ত করা হয় সুকান্তদের। প্রথমে পুলিশের তরফে বলা হয়, চার জনের প্রতিনিধিদলকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে রাজি হননি বিজেপি নেতারা। সুকান্তদের বক্তব্য, তাঁরা চাইছেন ঘরছাড়াদের প্রত্যেকেই ডিজির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাক। শেষে পুলিশের তরফে ১১ জন আক্রান্ত এবং চার বিজেপি নেতাকেই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের একটি অংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে। রাজ্য পুলিশ, বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা এলাকায় টহল দিয়েছেন গত কয়েক দিনে। ধীরে ধীরে এলাকায় শান্তি ফিরতে শুরু করেছে। শমসেরগঞ্জ বাদে জেলার বাকি অংশে ইন্টারনেট পরিষেবাও চালু হয়েছে।

মুর্শিদাবাদের অশান্তির তদন্তে ইতিমধ্যে ৯ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে রাজ্য পুলিশ। সিটের নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক আধিকারিক। এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদের ঘটনার তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে তুলে দেওয়ারও দাবি উঠতে শুরু করেছে। নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় মহিলা কমিশনও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.