‘আমি নিরপরাধ’! আদালত থেকে বেরিয়ে দু’বার একটি শব্দই বললেন স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে অভিযুক্ত সৌরভ

তিনি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে এমনই দাবি করলেন যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরী। শনিবার সৌরভকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘আমি নিরপরাধ।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাতে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং হস্টেলের আবাসিক সৌরভকে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল স্বয়ং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর পরে রাতে তিনি গ্রেফতার হন। পুত্রের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’র ঘটনায় সৌরভের নামে থানায় অভিযোগ করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডু। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ।

শনিবার সৌরভকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে আগামী ২২ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আদলতে সৌরভের আইনজীবী অরিন্দম দাস সওয়াল করেন, ‘‘সৌরভ স্বপ্নদীপের সহপাঠী, রুমমেট, বন্ধু নন। সৌরভের ফোন থেকে ফোনও করা হয়নি। যার ফোন থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেটা দেখা হোক। স্বপ্নদীপের বাবা সৌরভকে চিনতেন না। হয়তো ছেলের থেকে শুনেছেন।’’ অন্য দিকে, আদালতে সরকারি কৌঁসুলি সৌরিন ঘোষাল জানান, তিন জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে হবে। দু’টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সৌরভের ফোনও রয়েছে। ওই ফোনের ‘কল ডিটেলস্’ খতিয়ে দেখা হবে। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘একটা অত্যাচারের গল্প পাচ্ছি। যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁর নামও আসছে।’’

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপকে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। র‌্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যু বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রের পরিবার। স্বপ্নদীপের বাবা পুলিশকে জানান, গত ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি চায়ের দোকানে তাঁর সঙ্গে সৌরভের আলাপ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ জানান, ২০২২ সালে তিনি এমএসসি পাশ করেছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সৌরভের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। স্বপ্নদীপের বাবাকে সৌরভই ‘অভয়’ দেন, হস্টেলে গেস্ট হয়ে থাকা যায়। নিম্নবিত্ত পরিবার স্বপ্নদীপের। তাই সৌরভের কথায় ভরসা পেয়েছিলেন রামপ্রসাদ। সৌরভের হাত ধরে বলেছিলেন, ছোট ভাইয়ের মতো স্বপ্নদীপকে দেখতে। তিনি এ-ও জানান, সৌরভই যাদবপুরের মেন হস্টেলে মনোতোষ নামে এক ছাত্রের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন স্বপ্নদীপের। মনোতোষ থাকেন ১০৪ নম্বর রুমে। স্বপ্নদীপের থাকার ব্যবস্থা হয় ৬৮ নম্বর রুমে। ওই ঘরে স্বপ্নদীপের রুমমেট ছিলেন কল্লোল ঘোষ নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র। এ হেন সৌরভকেই ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ বলে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের সামনে মন্তব্য করেন মৃত ছাত্রের বাবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.