‘আমি পলিগ্রাফ পরীক্ষার মুখোমুখি হতেও রাজি’! আপ সাংসদ স্বাতীর দাবি, তিনি নির্যাতনের শিকার

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব বৈভব কুমারের বিরুদ্ধে তিনি কোনও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেননি। আম আদামি পার্টি (আপ)-র রাজ্যসভা সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল এই দাবি করে বললেন, ‘‘প্রয়োজনে আমি পলিগ্রাফ পরীক্ষার মুখোমুখি হতেও রাজি।’’

কেজরী এবং তাঁর দল ইতিমধ্যেই স্বাতী ‘নিগ্রহকাণ্ডে’ গ্রেফতার বৈভবের পাশে দাঁড়িয়েছে। আপেরই সাংসদ স্বাতীর বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁতের অভিযোগও তুলেছে। এ প্রসঙ্গে স্বাতীর প্রশ্ন, অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর দল তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বৈভব শাসিয়েছেন, যদি তিনি গ্রেফতার হন, তা হলে কেজরী এবং আপের সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দেবেন। দিল্লির আবগারি দুর্নীতিকাণ্ডে একের পর এক নেতার গ্রেফতারিতে বেসামাল আপ তাই বৈভবের পাশে দাঁড়িয়েছে।

দিল্লি পুলিশ বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছিল, আপের রাজ্যসভা সাংসদ স্বাতীর ‘নিগ্রহকাণ্ডে’ কেজরীর বাবা-মায়ের বয়ান রেকর্ড করা হবে বৃহস্পতিবার। তার পরেই কেজরী এক্স পোস্টে লেখেন, ‘‘আগামিকাল দিল্লি পুলিশ বাড়িতে এসে আমার বৃদ্ধ এবং অসুস্থ বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’’ কেজরীর বাবা এবং মাকে পুলিশ হেনস্থা করছে বলে অভিযোগ করেন দিল্লির মন্ত্রী অতিশী। শেষ পর্যন্ত পুলিশ বয়ান রেকর্ড মুলতুবি রাখে বৃহস্পতিবার। এর পরেই ওই মন্তব্য করেন স্বাতী।

স্বাতীর দাবি, গত ১৩ মে কেজরীওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাসভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময়ই তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করেন কেজরীর ব্যক্তিগত সচিব বৈভব কুমার। আপ সাংসদের দাবি, বৈভব তাঁকে ৭-৮টি চড় এবং পেটে লাথি মারেন। ১৬ মে দিল্লি পুলিশের কাছে বৈভবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন স্বাতী। সে রাতেই স্বাতীর মেডিক্যাল পরীক্ষাও করানো হয়েছিল দিল্লির এমসে। ১৭ মে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারার অধীনে স্বাতী নিজের বয়ান নথিভুক্ত করেন।

স্বাতীর অভিযোগ এবং এমসের মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৮ মে পুলিশ বৈভবকে গ্রেফতার করে। মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টে স্বাতীর ডান গাল এবং বাঁ পায়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে দিল্লি পুলিশের দাবি। জখম রয়েছে চোখের তলাতেও। যা থেকে তাঁর তোলা শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ ‘প্রমাণিত’ বলেই তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন। দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, স্বাতী-বর্ণিত নিগ্রহকাণ্ডের সময় কেজরীর বাসভবনে তাঁর বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন। তাই তদন্তের স্বার্থেই তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করা প্রয়োজন।

স্বাতী পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরেই গোটা ঘটনা নিয়ে ‘রাজনৈতিক টানাপড়েন’ শুরু হয়। স্বাতী ‘নিগ্রহকাণ্ড’ কার্যত নতুন মোড় নেয়। ঘটনায় দলের পুরনো অবস্থান থেকে সরে গিয়ে ১৭ মে বিকেলে দিল্লির আপ মন্ত্রী অতিশী দাবি করেন, স্বাতী বিজেপির এজেন্ট হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালকে ফাঁসাতে গিয়েছিলেন। কেজরী সে দিন বাসভবনে না থাকায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৈভবকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন অতিশী। অথচ গত ১৪ মে আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ বিবৃতি দিয়ে বৈভবের হাতে স্বাতীর হেনস্থা হওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন।

১৮ মে স্বাতীকাণ্ডের নতুন ভিডিয়ো প্রকাশ করেছিল আপ। দিল্লি পুলিশকে ‘ট্যাগ’ করে এক্স হ্যান্ডল পোস্টে স্বাতী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান কেজরীর বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। তার পরেই এই পদক্ষেপ করে কেজরীর দল। প্রকাশিত ভিডিয়োতে (আনন্দবাজার অনলাইন যার সত্যতা যাচাই করেনি) দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কেজরীর বাসভবন থেকে পুলিশি ঘেরাটোপে বেরিয়ে আসছেন স্বাতী। তার আগে আপ প্রকাশিত প্রথম ভিডিয়োতে (যার সত্যতাও আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে উচ্চৈঃস্বরে তর্ক করতে দেখা গিয়েছে স্বাতীকে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.