ফের বেপরোয়া হুমায়ুন! আবার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক হবে তৃণমূলের! শাস্তি কি হবে আদৌ? ঘোর সংশয় শাসকদলের অন্দরে

‘বেপরোয়া’ বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তাঁর বিরুদ্ধে ফের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আলোচনায় উঠেছে। তাই আবারও তাঁকে বাগে আনতে বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূল পরিষদীয় দলের অধীন শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। তৃণমূল সূত্রে খবর, সম্প্রতি বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করায় বেজায় বিরক্ত তৃণমূল নেতৃত্ব। সম্প্রতি তিনি দাবি করেন, জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতারের নেপথ্যে রয়েছেন অপূর্ব। এর পরেই হুমায়ুনকে নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। কিন্তু দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, বার বার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তাঁকে সর্তক করলেও ফল হয়নি। তাই এ বার ফের তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে কি আদৌ কোনও ফল হবে?

সম্প্রতি হুমায়ুন দাবি করেছেন, “জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতারের নেপথ্যে রয়েছেন জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার। ইডিকে প্রভাবিত করেই তিনি গ্রেফতার করিয়েছেন।” তাঁর আরও অভিযোগ, “আমার কাছে প্রমাণ আছে, ঠিক সময়ে তা প্রকাশ করব।” শুধু জেলা সভাপতি নন, বহরপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠানের বিরুদ্ধেও হুমায়ুনের কটাক্ষে রীতিমতো অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল। দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি এ বার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেই দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।

পরিষদীয়মন্ত্রী তথা দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হুমায়ুনের বক্তব্য আমি শুনেছি। কিন্তু এই বিষয়ে আমি প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করব না। আমি ছাড়াও শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির আরও যে সকল সদস্য রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই বৈঠকের আয়োজন করতে হবে। তবে বৈঠকের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে, তার মতামত নিয়েই বৈঠক করব।’’ গত কয়েক দিন ধরে জেলা সভাপতি অপূর্ব-সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতাদের প্রকাশ্যে তীব্র আক্রমণ করে চলেছেন হুমায়ুন। তিনি বলেছেন, “জেলার যাঁরা বিভিন্ন পদে আছেন, তাঁদের অতীত রাজনৈতিক অবস্থান ও পদপ্রাপ্তির ইতিহাস আমি প্রকাশ্যে আনব, তাঁদের ছবি দেওয়ালে টাঙিয়ে দেব।” হুমায়ুন আরও বলেন, “আমাকে দল থেকে বের করে দিক, আমি বেরিয়ে যেতে চাই। তার পর আমি দেখাব জেলার রাজনীতি কাকে বলে! ২০২৪ সালে যে অধীর চৌধুরীকে হারিয়েছি, প্রয়োজনে সেই অধীর চৌধুরীর সঙ্গে জোট করে কান্দি বিধানসভায় প্রার্থী দিয়ে বুঝিয়ে দেব।”

এর আগেও ভরতপুরের বিধায়ককে সতর্ক করেছিল তৃণমূল। ২০২২ সালে জেলার দলীয় সভায় প্রকাশ্যে নেতৃত্বের সমালোচনা করার পর প্রথম বার হুমায়ুনকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করেন তৎকালীন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। পরে ২০২৩ সালে জেলা কমিটি ও ব্লক সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেন হুমায়ুন। সেই সময়ে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তাঁকে লিখিত ভাবে সতর্ক করে এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় প্রকাশ্যে না আনার নির্দেশ দেয়। তবুও তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করায় তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়। সে বার বক্সীকে লিখিত জবাব পাঠিয়ে ‘শাস্তি’ থেকে বেঁচে যান হুমায়ুন।

২০২৪ সালের মাঝামাঝি আবারও এক সভায় জেলা নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখেন হুমায়ুন। তখনও কমিটি তাঁকে ডেকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করে বলে খবর। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। বরং ২০২৫ সালের বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে অসংবিধানিক ভাষায় আক্রমণ করায় অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল। সে বারও ভাষা সংযমের পরামর্শ দিয়ে শো কজ়ের চিঠি ধরান শোভনদেব। পরে বিধানসভায় নিজের ঘরে ডেকে প্রকাশ্যে বিতর্কিত কথা বলা থেকেও বিরত থাকতে হুমায়ুনকে নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু শোভনদেবের ঘর থেকে বেরিয়েই আবারও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিতে শুরু করে দেন ভরতপুরের এই তৃণমূল বিধায়ক।

পরিষদীয় দলের একাংশের বক্তব্য, “হুমায়ুন বার বার সতর্ক হওয়া সত্ত্বেও একই কাজ করছেন। এ বার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর পথ নেই। কিন্তু কোনও পদক্ষেপেই তো হুমায়ুনকে রোখা যাচ্ছে না।” এত বার সতর্ক করার পরও যদি শৃঙ্খলাভঙ্গ চলতেই থাকে, তা হলে এ বার দল কী পদক্ষেপ নেয়— সেই দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। কারণ আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের কারণে আপাতত দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে কোনও বিতর্কে জড়াতে নারাজ বাংলার শাসকদল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.