এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) রিমান্ড নথিতে জানিয়েছে, হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে ১৯ কোটি টাকা দিয়েছিলেন তিনি। ভাগে ভাগে সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল। কোন খাতে কত টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা-ও জানিয়েছিলেন তিনি। শনিবার কুন্তলকে আদালতে পেশ করার পর দাবি করে ইডি। কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থার মতে, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের চাকরি করে দেওয়ার জন্য ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত দেওয়া হতে পারে কুন্তলকে।
তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ তাপস আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে দাবি করেছেন, চাকরির জন্য প্রার্থীদের থেকে টাকা তুলে তাঁর অফিসে আনা হত। সেই টাকা তাঁর ‘নির্দেশ’ মতোই পৌঁছে যেত কুন্তলের কাছে। তাঁর ‘বয়ানের ভিত্তি’তেই ইডি আদালতে দাবি করেছে, কুন্তলকে ১৯ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন তাপস। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য ১০ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগের জন্য ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল কুন্তলকে। ইডির আরও দাবি, ২০১৪ সালে টেট পাশের শংসাপত্র জোগাড় করে দেওয়ার জন্য কুন্তলকে ৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তাপস।
ইডি আরও জানিয়েছে, কুন্তলের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক, গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি প্রার্থীদের ‘ভেরিফিকেশন’-এর নথি মিলেছে। কুন্তলের বাড়ি থেকে একটি ডায়েরিও মিলেছে। সেই ডায়েরিতে রয়েছে বেশ কিছু নাম এবং হিসাব। ইডি আধিকারিকদের মতে, যে প্রার্থীদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই চাকরি পেয়েছেন। ডায়েরি থেকে তদন্তকারীদের কাছে সেটাই স্পষ্ট হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। যদিও কুন্তল দাবি করেছেন, ওই ডায়েরি তাঁর নয়।
ই়ডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে দাবি করেন, এই দুর্নীতি তদন্তে নেমে ৩০ কোটি টাকার হদিস মিলেছে। যদিও কুন্তল এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি বলেই দাবি ইডির। তারা জানিয়েছে, কুন্তল জেরায় দাবি করেছেন, ৩০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন ‘তৃতীয় ব্যক্তি’। তাপসের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নিয়েছিলেন তিনি। যদিও ইডি মনে করছে এ ভাবে আসলে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
শনিবার সকালে কুন্তলকে গ্রেফতার করেছে ইডি। তার আগে ২৪ ঘণ্টা ধরে কুন্তলের দু’টি ফ্ল্যাটে চলেছে তল্লাশি। গ্রেফতারের পর ধৃত যুবনেতাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করান ইডি আধিকারিকরা। তাপস দাবি করেছিলেন, ৩২৫ জন শিক্ষক পদপ্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন কুন্তল। এ ছাড়াও তাপসের পরিচিতেরা তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা নিয়েছেন কুন্তল। সেই সংক্রান্ত নথিও তাঁর কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তাপস। কুন্তলকে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল সিবিআই।