আইপিএল শেষ। জিতেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। দু’মাস ব্যাপী ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষ হলেও ক্রিকেটারদের অবসরের সময় নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যাচ্ছে কিছু দিন পরেই। ভারতীয় দল প্রথম ম্যাচ খেলবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ৫ জুন। তার আগে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়া ১৫ জন ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করল আনন্দবাজার অনলাইন।
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক)
আইপিএলের অধিনায়কত্ব গেলেও দেশের অধিনায়কের পদে এখনও রয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে দেশ তাঁর নেতৃত্বেই নামবে। তবে বিশ্বকাপে যে রোহিত খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে নামতে পারবেন, এমনটা নয়। এই আইপিএলটা ভাল যায়নি তাঁর। দল তো গ্রুপে সবার নীচে শেষ করেছেই, রোহিত নিজেও ব্যাট হাতে সাফল্য পাননি। ১৪ ম্যাচে ৪১৭ রান করেছেন। একটি শতরান এবং একটি অর্ধশতরান রয়েছে। রোহিত-জাতীয় পারফরম্যান্স একেবারেই নয়।
হার্দিক পাণ্ড্য (সহ-অধিনায়ক)
বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে সবচেয়ে বেশি কাটাছেঁড়া, আলোচনা চলতে পারে যাঁকে নিয়ে, তিনি হার্দিকই। গুজরাত থেকে মুম্বই এসে অধিনায়ক হয়ে খোদ আইপিএল সমর্থকদের চোখেই খলনায়ক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রতিটি ম্যাচেই তাঁকে কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। পারফরম্যান্স দিয়েও সমালোচনা ঢাকতে পারেননি। ১৪ ম্যাচে মাত্র ২১৬ রান। রয়েছেন ৪৭ নম্বরে। উইকেট পেয়েছেন মোটে ১১টি। সেখানে ৩৭ নম্বরে।
যশস্বী জয়সওয়াল
বিশ্বকাপের দলে ওপেনার হিসাবে তাঁর খেলা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু ১৬ ম্যাচে ৪৩৫ রান করা যশস্বীর পারফরম্যান্স এ বারের আইপিএলে আশানুরূপ নয়। একটি শতরান এবং একটি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। দরকারের সময় জ্বলে উঠতে পারেননি খুব বেশি ম্যাচে। ভুগিয়েছে বেশ কিছু টেকনিক্যাল দুর্বলতাও।
বিরাট কোহলি
আইপিএলের আগে সবচেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে কোনও খেলোয়াড় যদি খেলতে নামেন, তিনি কোহলি। দল এলিমিনেটর থেকে ছিটকে গিয়েছে। কোহলির আইপিএল জয় এ বারও অধরা। কিন্তু নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি হতেই পারেন। সব ঠিকঠাক থাকলে সর্বোচ্চ রান করে আইপিএলের কমলা টুপি তাঁর মাথাতেই উঠবে। ১৫ ম্যাচে ৭৪১ রান করেছেন। একটি শতরান এবং পাঁচটি অর্ধশতরান করেছেন। ধারেকাছে কেউ নেই।
সূর্যকুমার যাদব
আইপিএল থেকেই তাঁর পরিচিতি। আইপিএলে ভাল খেলেই ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়ে নিজেকে এক সময় বিশ্বের এক নম্বর করে তুলেছিলেন। কিন্তু এই আইপিএল তাঁর ভাল যায়নি। ১১ ম্যাচে করেছেন ৩৪৫ রান। রয়েছেন ২৬ নম্বরে। বল করেন না। ব্যাট হাতেও তাঁর পারফরম্যান্স আহামরি নয়। সমস্যা হল, চার নম্বরে তাঁর জায়গায় বিকল্পও নেই।
ঋষভ পন্থ
আইপিএল শুধু নয়, ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ‘কামব্যাক স্টোরি’ বলা যায় ঋষভ পন্থের ফিরে আসাকে। প্রায় দু’বছর আগে গাড়ি দুর্ঘটনার পর ক্রিকেট খেলা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। পন্থ শুধু সময়ের আগেই ফিরে আসেননি, গোটা আইপিএলে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দল হয়তো খুব ভাল খেলতে পারেনি। তবে পন্থের পারফরম্যান্স নজর কেড়ে নিয়েছে। ১৩ ম্যাচে ৪৪৬ রান করেছেন পন্থ। তিনটি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। প্রতি ম্যাচেই কোনও না কোনও ভাবে দলের হয়ে অবদান রাখার চেষ্টা করছেন।
সঞ্জু স্যামসন
অন্যতম সেরা আইপিএল গিয়েছে সঞ্জুর । বিশ্বকাপের দ্বিতীয় উইকেটকিপার কে হবেন, এ প্রশ্নে তর্কের কোনও অবকাশই রাখেননি তিনি। যেমন ব্যাট করেছেন, তেমনই নজর কেড়েছে তাঁর অধিনায়কত্ব। দুর্ভাগ্যবশত, শুরু থেকে দাপটে খেললেও শেষ দিকে রাজস্থান ছন্দ হারানোয় দলকে ফাইনালে তুলতে পারেননি। তবে ১৬ ম্যাচে ৫৩১ রান করা সঞ্জু নজর কেড়েছেন।
শিবম দুবে
রিঙ্কু সিংহের বদলে তাঁকে প্রথম ১৫ জনে নেওয়ার পর থেকেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। নির্বাচকেরা যতই বলুন বল করতে পারেন বলে অগ্রাধিকার পেয়েছেন, সে কথা কেউই মানছেন না। দল ঘোষণার পর থেকে শিবমের পারফরম্যান্স আরও খারাপ হয়েছে। কোনও ম্যাচেই তিনি ভাল খেলতে পারেননি। ১৪ ম্যাচে মাত্র ৩৯৬ রান করেছেন। তালিকায় ১৮ নম্বরে। তিনটি অর্ধশতরান ছাড়া বলার মতো কিছুই নেই। ১৪ ম্যাচে মাত্র একটি ওভার বল করেছেন। একটি উইকেট নিয়েছেন। বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার পরেও বোলার হিসাবে তাঁকে ব্যবহার করেনি চেন্নাই।
রবীন্দ্র জাডেজা
অলরাউন্ডার হিসাবে ভারতীয় দলের বড় ভরসা তিনি। কিন্তু আইপিএলের কোনও ম্যাচে জাডেজা যে খুব ভাল খেলেছেন এটা বলা যাবে না। পারফরম্যান্সও সে কথা বলছে না। ১৪ ম্যাচে ২৬৭ রান করেছেন। মাত্র একটি অর্ধশতরান। নিয়েছেন আটটি উইকেট। চোখে পড়ার মতো পারফরম্যান্স নয় একেবারেই।
অক্ষর পটেল
অলরাউন্ডার হিসাবে জাডেজার বিকল্প হতে পারেন অক্ষর। কিন্তু ভাল পারফরম্যান্সের জোরে তিনিও দলে ঢোকার পক্ষে জোরালো দাবিদার নন। ১৪ ম্যাচে দু’টি অর্ধশতরান-সহ ২৩৫ রান করেছেন। উইকেট নিয়েছেন ১১টি। তবে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে থাকতে পারেন অক্ষর।
কুলদীপ যাদব
আইপিএলে দিল্লির তৃতীয় সফলতম বোলার। আমেরিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের পিচে তাঁর চায়নাম্যান বোলিং কাজে লাগতে পারে। ১১ ম্যাচে ১৬টি উইকেট নিয়েছেন কুলদীপ। ইকোনমি রেট ৮.৬৯।
যুজবেন্দ্র চহাল
গত দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি। কিন্তু এ বার চহালকে বাদ দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি নির্বাচকেরা। আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে কার্যকরী হতে পারে চহালের বোলিং। ১৫ ম্যাচে ১৮টি উইকেট নিয়েছেন। তবে ইকোনমি রেট নিয়ে আরও একটু খাটতে হবে। আইপিএলে ওভারপিছু প্রায় ১০ রান করে দিয়েছেন।
আরশদীপ সিংহ
বাঁ হাতি পেসার হিসাবে প্রথম একাদশে তাঁর জায়গা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভারতীয় দলে নিয়মিত সুযোগ পান না। কিন্তু বিশ্বকাপের দলে তাঁকে রাখা হয়েছে। আইপিএলে উইকেটপ্রাপকদের তালিকায় চার নম্বরে রয়েছেন। ১৪ ম্যাচে ১৯টি উইকেট রয়েছে। পঞ্জাব এ বারও প্লে-অফে উঠতে পারেনি। কিন্তু আরশদীপের বোলিং নজর কেড়ে নিয়েছে।
যশপ্রীত বুমরা
গত বার চোটের কারণে আইপিএলে খেলতে পারেননি। এ বার বুমরা স্বমেজাজেই খেলেছেন। দল যতই পয়েন্ট তালিকায় সবার শেষ থাকুক না কেন, বুমরার বোলিং খেলার জন্য ব্যাটারেরা এখনও নিজেকে সে ভাবে প্রস্তুত করতে পারেননি। আইপিএলের উইকেটপ্রাপকদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। ১৩ ম্যাচে ২০টি উইকেট নিয়েছেন। পাঁচ উইকেটও রয়েছে একটি ম্যাচে।
মহম্মদ সিরাজ
সিরাজের দল বেঙ্গালুরুর আইপিএলের এলিমিনেটর থেকে ছিটকে গিয়েছে। সিরাজ নিজেও খুব আহামরি কিছু বল করতে পারেননি। ১৪ ম্যাচে ১৫ উইকেট একেবারেই তাঁর প্রতিভার সঙ্গে মানানসই নয়। তা ছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান দেওয়ার রোগও এখনও কাটেনি। এ বারের আইপিএলে প্রায় দশের কাছাকাছি রান দিয়েছেন প্রতি ওভারে।