তাঁদের কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। ৩৬৫ দিনে একদিনও তাঁরা ছুটি পান না। পরিবার আর সংসারের জন্য হাসিমুখে পরিশ্রম করতে থাকেন, প্রত্যেকের যাবতীয় খুঁটিনাটির দিকে নজর রাখেন। এতকিছু করে কি পান গৃহবধূরা? সাম্প্রতিক একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি তুলে ধরেছে মাদ্রাজ হাই কোর্ট (Madras High Court)। রায় দিতে গিয়ে আদালত সাফ জানিয়েছে, পরিবারের যাবতীয় সম্পত্তিতে সমান অধিকার থাকবে গৃহবধূদের (Housewife)। কারণ এই সম্পত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে তাঁদের পরোক্ষভাবে অবদান থাকে এবং সেই অবদান অনস্বীকার্য।
এক দম্পতির বিবাদের মামলার রায় দিতে গিয়েই এই কথা জানিয়েছে মাদ্রাজ হাই কোর্ট। জানা গিয়েছে, কান্নাইয়ান নায়ডু নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ১৯৬৫ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। দীর্ঘদিন বিদেশে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেই সময় দেশে থেকে গোটা সংসারের হাল ধরেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু কান্নাইয়ানের অভিযোগ, তাঁর উপার্জিত অর্থ দিয়ে যা সম্পত্তি কেনা হয়েছিল সেগুলি আত্মসাৎ করতে চাইছেন স্ত্রী। এমনকি সম্পত্তি হাতানোর জন্য অন্যদের সাহায্যও নিয়েছেন স্ত্রী, এমনটাই অভিযোগ আনেন কান্নাইয়ান।
২০০২ সালের দায়ের হওয়া এই মামলার শুনানিতে কান্নাইয়ানের স্ত্রী পালটা দাবি করেন, একা হাতে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁর কেরিয়ার গড়া সম্ভব হয়নি। উলটে নিজের যাবতীয় গয়না ও সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে স্বামীর বিদেশযাত্রার খরচ জোগাড় করেছেন। স্বামীর উপার্জিত অর্থের পাশাপাশি তিনি নিজেও সেলাইয়ের কাজ করে রোজগার করেছেন। দু’জনের সম্মিলিত অর্থ দিয়েই সংসারের সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
দু’পক্ষের বয়ান খতিয়ে দেখে মাদ্রাজ হাই কোর্ট রায় দেয়, সংসারের যাবতীয় সম্পত্তিতে (Family Property) সমান অধিকার রয়েছে গৃহবধূর। কারণ প্রত্যক্ষভাবে রোজগার না করলেও অর্থ উপার্জন করতে স্বামীকে সাহায্য করেন তাঁরা। ছুটি না নিয়েই তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এছাড়াও মনে করা হয় স্বামী ও স্ত্রী আসলে গাড়ির দুই চাকা। তাই সম্পত্তির অধিকারে দুই চাকারই সমান অধিকার থাকবে। আদালত আরও জানায়, গৃহবধূর অবদান প্রসঙ্গে আইনে কিছু লেখা নেই। তবে এই বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ থাকতেই পারে। গৃহবধূদের ন্যায্য অধিকার থেকে কোনও আইনই বঞ্চিত করতে পারে না।