লেখা গেল না চক দে ইন্ডিয়া! ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেলিব্রেশনের ছবি বদলে গেল হৃদয়ভঙ্গের হতাশায়। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডু-অর-ডাই ক্রসওভার ম্যাচ (IND vs NZ Live, Hockey World Cup 2023) হেরেই গেল ভারত। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আর যাওয়া হল না হরমনপ্রীত সিং অ্যান্ড কোংয়ের। বিশ্ব হকি ব়্যাঙ্কিংয়ে ছয় নম্বরে থাকা ভারত রবির সন্ধ্যায় বিশ্বের বারো নম্বর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নকআউট ম্যাচে খেলতে নেমেছিল। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খেলার স্কোল ৩-৩ থাকায়, ম্যাচের সিদ্ধান্ত হয় পেনাল্টি শ্যুটআউটে। সেখানেই বাজিমাত করে নিউজিল্যান্ড। কিউয়িরা ৫-৪ ব্যবধানে জিতে ভারতের পদক জয়ের আশা বিলীন করে দিল। বিশ্বকাপে পদকের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হল টিম ইন্ডিয়ার। চলতি হকি বিশ্বকাপে পুল ‘ডি’-তে দুয়ে শেষ করেছিলেন হরমনপ্রীতরা। অন্যদিকে নিক উডের নিউজিল্যান্ডও পুল ‘সি’-তে দুয়ে শেষ করেছিল। দ্বিতীয় স্থানে থাকার জন্য ভারতকে এই ক্রসওভার ম্যাচ খেলতে হল। মরণ-বাঁচন এই ম্যাচ জিততে না পারলে, ঘরের মাঠে ভারতের খেতাব জয়ের স্বপ্ন এদিনই শেষ হয়ে যেত। এই ছিল সোজা হিসেব। এদিন সেটাই ঘটল। এবার নয় থেকে ষোলো নম্বর স্থানের ক্লাসিফিকেশন ম্যাচে খেলতে হবে ভারতকে।
এদিন প্রথম কোয়ার্টারে দাপট নিউজিল্যান্ডই দেখিয়ে ছিল। সিমোন চাইল্ডের রিভার্স হিট যদি পিআর শ্রীজেশ পা দিয়ে রুখে না দিতেন, তাহলে ভারত প্রথম কোয়ার্টারেই পিছিয়ে যেতে পারত। প্রথম কোয়ার্টার শেষ হওয়ার মিনিট দুয়েক আগে ভারত পেনাল্টি পেয়েছিল। অধিনায়ক হরমনপ্রীতের দুরন্ত শট গোললাইন সেভ করে দেন সিমন চাইল্ড। তবে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে একদম শুরুতেই কিউয়িরা গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করে। কিম কিংস্টোন ফাঁকায় গোল করতে পারলেন না। তবে এর পর থেকেই জমি কাড়ার খেলা শুরু করে দেয় ভারত। তেড়েফুঁড়ে ওঠে আক্রমণাত্মক ভারত। তখন ম্যাচের বয়স ১৭। তারকা ফরোয়ার্ড ললিত উপাধ্যায় অসাধারণ গোল করে গ্যালারিকে সেলিব্রেশনে ভাসান। মাঝমাঠে আকাশদীপের দারুণ কেরামতিতে পাস বাড়ান শামসেরকে। সেখান থেকে ললিত ফটোফিনিশ করে বেরিয়ে যান। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের মাঝামাঝি সময় ভারত ফের পেনাল্টি পায়। নীলকান্ত গোল করে ব্যবধান বাড়ান ঠিকই। তবে গোল বাতিল হওয়ায় ফ্রি-হিট পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। এরপর ভারত চতুর্থ পেনাল্টি আদায় করে নেয়, তবে গোল পোস্টের নীচে ডমিনিক ডিক্সন আবারও নিজের জাত চেনান। পা বাড়িয়ে নিউজিল্যান্ডকে বাঁচিয়ে দেন। ভারত চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক মেজাজে কিউয়িদের ওপর ক্রমেই চেপে বসে। বিরতির ঠিক কিছুটা আগে অধিনায়কে হরমনপ্রীতের একেবারে বাঁধিয়ে রাখা ড্র্যাগ ফ্লিক থেকে সুখজিৎ সিং গোল করেন। জটলার মধ্যে ডিক্সন চেষ্টা করেছিলেন শট আটকানোর। কিন্তু সুখজিৎ হকি স্টিকটা উুঁচিয়ে ধরে কাজের কাজটা করে দেন। ২৭ মিনিটে সুখজিতের করা গোলের ১১ মিনিটের মধ্যে স্যাম লেন ব্যবধান কমান। বিরতিতে ২-১ এগিয়েই মাঠ ছাড়ে ভারত।
তৃতীয় এবং চতুর্থ কোয়ার্টার থেকে খেলা বদলে গেল সাসপেন্স থ্রিলারে। বরুণ কুমারের ড্র্যাগ ফ্লিকে ভারত স্কোরলাইন ৩-১ করে। এরপর নিউজিল্যান্ডের হয়ে স্কোরলাইন ৩-২ করেন কেন রাসেল। ভারতীয় সমর্থকদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়ে নিউজিল্যান্ড ফাইনাল কোয়ার্টারে পেনাল্টিতে গোল করে স্কোরলাইন ৩-৩ করে ফেলে। সমর্থকদের হৃদপিণ্ড প্রায় হাতে চলে আসার মতো অবস্থা হয়। ফাইনাল কোয়ার্টারের অন্তিম পাঁচ মিনিটের আগে নিউজিল্যান্ড ১০ জনে খেলেছিল। হলুদ কার্ড দেখে নিক রস পাঁচ মিনিট বাইরে ছিলেন। পেনাল্টিতে ‘গ্রেট ওয়াল অফ ইন্ডিয়া’ শ্রীজেশ ব্যাক-টু-ব্যাক সেভ করে ভারতকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন একটা সময়। কিন্তু চোট পেয়ে তাঁকে মাঠের বাইরে বেরিয়ে যেতে হয় তাঁকে। ১৮ পেনাল্টিতে ম্যাচের ফয়সলা হয়। শেষ হাসি হাসে নিউজিল্যান্ড। আগামী ২৪ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে।