চার দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হল রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে (যিনি বালু নামেও পরিচিত)। আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি জেলে থাকবেন। গত ১৪ দিন ইডি হেফাজতে ছিলেন মন্ত্রী। এ বার জেলে থাকার পালা। আদালতে জ্যোতিপ্রিয়ের আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদন জানাননি। তবে ইডি হেফাজতে থেকে মন্ত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন। জেলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার আবেদনও জানানো হয়েছে।
১৪ দিনের হেফাজতের পর জ্যোতিপ্রিয়কে আদালতে হাজির করানোর কথা ছিল সোমবার। এক দিন আগেই ইডি তাঁকে আদালতে নিয়ে যায়। সেখানে কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনজীবী জানান, জ্যোতিপ্রিয়ের নির্দেশেই তাঁর স্ত্রী এবং কন্যাকে তিনটি সংস্থার ডিরেক্টর পদে বসানো হয়েছিল। জেরার মুখে জ্যোতিপ্রিয় এ কথা স্বীকারও করেছেন বলে ইডির দাবি। তবে ওই তিন সংস্থা চালানোর কথা স্বীকার করেননি জ্যোতিপ্রিয়।
জ্যোতিপ্রিয়কে এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে ইডি। সেই কারণে তারা জেলে গিয়ে মন্ত্রীকে জেরা করার আবেদন জানিয়েছে। ইডির আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘‘আমরা জানি কী করতে হবে। অভিযুক্ত রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী। তাই তদন্ত সংক্রান্ত কোনও তথ্য বাইরে এলে সমস্যা হবে। আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। সে বিষয়ে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’’
অন্য দিকে, বালুর আইনজীবী জানিয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয়ের শরীর এমনিতেই অসুস্থ। তার উপর ইডি দফতরে থেকে স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়েছে। জেলে তাঁর শারীরিক সমস্যা হলে যেন সব রকমের পরিষেবা পাওয়া যায়, তার আবেদন জানিয়েছেন ধৃত মন্ত্রীর আইনজীবী। তিনি আদালতে জানান, এই ১৪ দিন জেরা করে ইডি কী পেয়েছে, তা জানা দরকার। সব পক্ষের মতামত শুনে বিচারক ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত জ্যোতিপ্রিয়কে জেল হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলে গিয়ে জেরা করার আবেদনও মঞ্জুর করেছে আদালত।
আদালত জানিয়েছে, রবিবার মন্ত্রী বাড়ির খাবারই খেতে পারবেন। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁকে যে ডায়েট চার্ট মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, জেলে সেই পরিষেবা পাওয়া সম্ভব কি না, তার রিপোর্ট সোমবার দেবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগে রবিবার সকালে মন্ত্রীকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য নিয়ে গিয়েছিল ইডি। সেখানে যাওয়ার সময় দেখা যায়, জ্যোতিপ্রিয় অত্যন্ত দুর্বল। তিনি একা একা হাঁটতেও পারছেন না। দু’জন ইডি আধিকারিক তাঁকে ধরে ধরে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন। যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমের সামনে বিড়বিড় করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি মরে যাব। অবস্থা খুব খারাপ।’’ পরে তিনি বলেন, ‘‘ইডি হাত থেকে মুক্তি পেলাম।’’
এর পর স্বাস্থ্যপরীক্ষা সেরে আবার সিজিওতে ঢোকার সময় জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘আমার শরীর অত্যন্ত খারাপ। মৃত্যুশয্যা প্রায়। শরীরের এক দিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে।’’ আদালতে যাওয়ার সময় আবার বলেন, ‘‘আমার বাঁ দিক গিয়েছে। বাঁ দিকে সবটাই গিয়েছে।’’ আদালতে যাওয়ার সময় তাঁর বাঁ হাত নড়ছিল না। ধীরে ধীরে হাঁটছিলেন মন্ত্রী। শরীরে দুর্বলতার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
জ্যোতিপ্রিয় দীর্ঘ দিন ধরেই সুগারের রোগী। তাঁকে গ্রেফতার করার পর ইডি যখন আদালতে হাজির করেছিল, সেই সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মন্ত্রী। তাঁকে বেশ কিছু দিন হাসপাতালে কাটাতে হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে আবার ইডি দফতরে গিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। ১৪ দিন ইডি হেফাজত শেষে এ বার জেল হেফাজতে গেলেন মন্ত্রী।