টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি, ধস, মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হিমাচল প্রদেশে মারা গিয়েছেন অন্তত ৫৫ জন। উত্তরাখণ্ডে মারা গিয়েছেন তিন জন। ভেঙে পড়েছে বহু বাড়ি, রাস্তা। চলতি বছর হিমাচলে বর্ষা প্রবেশের পর থেকে বিপর্যস্ত জনজীবন। কেন এত ভারী বৃষ্টি হচ্ছে সে রাজ্যে? বিশেষজ্ঞেরা এর জন্য দায়ী করছেন নিম্নচাপ অঞ্চলের অবস্থানকে।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং তার জেরে দুর্ঘটনায় হিমাচল প্রদেশের মান্ডিতে মারা গিয়েছেন ১৯ জন। সোলানে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। শিমলায় ১৪ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। হামিরপুরে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধারকাজে নেমেছে জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মৌসম ভবন (আইএমডি) জানিয়েছে, মঙ্গলবার হিমাচলের ১২টি জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টাও চলতে পারে এই ভারী বৃষ্টি। উত্তরাখণ্ডেও রয়েছে সেই পূর্বাভাস। এই দুই রাজ্যে লাল সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন।
মৌসম ভবনের আধিকারিক চরণ সিংহ জানিয়েছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং আরব সাগর থেকে আসা দক্ষিণ মৌসুমী বায়ুর কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টা হিমাচল এবং উত্তরাখণ্ডে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে জারি লাল সতর্কতা। তার পরের দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বভাস রয়েছে ওই দুই রাজ্যে। সেক্ষেত্রে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ১৮ অগস্ট পর্যন্ত এই দুই রাজ্যে বৃষ্টি চলতে পারে।
চলতি বর্ষার মরসুমে হিমাচলে ১৭০টি মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং ধসের ঘটনা হয়েছে। ৯,৬০০টি বাড়ি আংশিক বা পুরোপুরি ভাবে ভেঙে পড়েছে। গত মাসে বৃষ্টি এবং তার জের ধসের কারণে মারা গিয়েছেন ১৩০ জন। চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে, সোমবার পর্যন্ত হিমাচলে বৃষ্টি হয়েছে ১৪৭.৪০ মিলিমিটার। স্বাভাবিকের থেকে ৫ শতাংশ বেশি। আর শুধু সোমবারেই কাংড়ায় বৃষ্টি হয়েছিল ২৭৩ মিলিমিটার। সুজানপুরে বৃষ্টি হয়েছে ২৫৪ মিলিমিটার। শিমলায় বৃষ্টি হয়েছে ১২৬ মিলিমিটার। ধরমশালায় বৃষ্টি হয়েছে ২৫০ মিলিমিটার।
কিন্তু হিমালয়ের পাদদেশের রাজ্যগুলিতে কেন এত বৃষ্টি হচ্ছে? মৌসম ভবনের প্রধান এম মহাপাত্র জানিয়েছেন, বর্ষার সময় তৈরি হওয়া নিম্নচাপ অঞ্চল (মনসুন ট্রাফ) স্বাভাবিক অবস্থানের তুলনায় উত্তরে রয়েছে। এখন সেই নিম্নচাপ অঞ্চল রয়েছে হিমালয়ের পাদদেশে। মনে করা হচ্ছে, সে কারণেই হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে লাগাতার ভারী বৃষ্টি হয়ে চলেছে। মহাপাত্র একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘হিমালয়ের পাদদেশ লাগোয়া অঞ্চলে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টি হয়ে চলেছে। রবিবার সেখানে বর্ষার মুখোমুখি হয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। সোমবারেও তা চলেছে। এ বার বর্ষা দক্ষিণমুখী। তার জেরে পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টি কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর মধ্য-পূর্ব ভারতে বাড়তে পারে বৃষ্টি।’’
বর্ষায় এক টানা অনেক দিন বৃষ্টির পর তা কয়েক দিনের জন্য থেমে যায়। একে বলে বর্ষার বিরতি। ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব এম রাজীবন জানিয়েছেন, চলতি বছর এই বিরতিতে নিম্নচাপ অঞ্চল উত্তরে হিমালয় পর্বতের পাদদেশে সরে গিয়েছে। সে কারণেই হিমালয়ের পাদদেশে এবং উত্তরপূর্ব ভারতে আবার ভারী বৃষ্টি হয়ে চলেছে।