ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে আইএসএলের শেষ চারে প্রথম পর্বের দ্বৈরথে ৩৯ মিনিটে হেক্তর ইউতসের ভুলেই গোল করে ওড়িশা এফসি-র জয় নিশ্চিত করেছিলেন রয় কৃষ্ণ। ১-২ গোলে হারের জন্য স্পেনীয় ডিফেন্ডারকেই কাঠগড়ায় তুলছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। যুবভারতীতে রবিবার শেষ চারে দ্বিতীয় পর্বের দ্বৈরথে ফের মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের প্রতিপক্ষ ওড়িশা।
যুবভারতীতে রবিবার কৃষ্ণকে আটকাতে পারবেন?
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অনুশীলন শেষ করে হোটেলে ফেরার সময় এই প্রশ্ন শুনেই শক্ত হয়ে গেল হেক্তরের চোয়াল। লা লিগায় লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, করিম বেঞ্জেমা-দের বিরুদ্ধে খেলা সবুজ-মেরুন তারকার হুঙ্কার, ‘‘যুবভারতীতে কৃষ্ণ আর গোল করতে পারবে না।’’ আর এক তারকা দিমিত্রি পেত্রাতস বলে দিলেন, ‘‘এই ম্যাচে আমরাই এগিয়ে থাকব।’’ ওড়িশার কাছে আগের ম্যাচে হার থেকে কী শিক্ষা নিয়েছেন? অস্ট্রেলীয় তারকার জবাব, ‘‘রবিবারই ওদের বুঝিয়ে দেব।’’
ভুবনেশ্বর থেকে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই কলকাতায় ফিরেছে মোহনবাগান। বৃহস্পতিবার থেকে যুবভারতীতে ফিরতি দ্বৈরথের প্রস্তুতি শুরু করেছেন কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস। ওড়িশা ম্যাচে প্রথম একাদশে খেলা ফুটবলার-রা হাল্কা অনুশীলন করেই উঠে যান। বাকিদের নিয়ে ঘণ্টা দেড়েক প্রস্তুতি সারলেন তিনি। নির্বাসন কাটিয়ে ব্রেন্ডন হামিল ফিরছেন। তাঁকে অনুশীলন ম্যাচে জেসন কামিংসদের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দেখে নিলেন সবুজ-মেরুনের কোচ। ওড়িশার কাছে হারের জন্য রক্ষণের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছিলেন হাবাস। বলেছিলেন, ‘‘আমাদের রক্ষণে অনেক ভুল হয়েছে। সঙ্ঘবদ্ধতা ছিল না। তা ছাড়া ফুটবলারদের একাধিক ব্যক্তিগত ভুলের জন্যই হারতে হয়েছে। তিন মিনিটের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার পরে ছেলেদের মধ্যে কিছুটা গা ছাড়া মনোভাবও দেখা গিয়েছিল।’’ হাবাসের হারের ময়নাতদন্তে আরও যে একটি কারণ উঠে এসেছে তা হল ফুটবলারদের মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দূরত্ব থাকা। তাঁর মতে সে দিন হেক্তরকে যদি এক জন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সাহায্য করতেন, তা হলে কৃষ্ণ গোল করতে পারতেন না। কিন্তু সেই সময় সবুজ-মেরুন হেক্তরের ২৫ গজের মধ্যে কেউ ছিলেন না।
ওড়িশার খেলার ধরন হল দুই প্রান্ত দিয়ে ঝড়ের গতিতে আক্রমণে উঠে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে বল ভাসিয়ে দেওয়া। দ্বিতীয়ত সেট-পিস থেকে গোল করার চেষ্টা করা। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কার্লোস দেলগাদো সমতা ফিরিয়েছিলেন আহমেদ জাহুর কর্নার থেকে গোল করে। রক্ষণের ভুল-ত্রুটি মেরামতের উপরেই বৃহস্পতিবার সন্ধেয় বেশি জোর দেন হাবাস। তবে শারীরিক ভাবে হাবাস এখনও দুর্বল। খুব বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেই পারছেন না। মাঠের মধ্যে চেয়ারে বসেই দেখলেন ম্যাচ অনুশীলন। দুর্বল শরীরে কেন মাঠে আসছেন? হাসতে হাসতে হাবাস বললেন, ‘‘ফুটবলই আমার সেরে ওঠার একমাত্র ওষুধ।’’
মোহনবাগানকে প্রথমবার লিগ-শিল্ডে চ্যাম্পিয়ন করেছেন হাবাস। ৪ মে আইএসএল ট্রফি কি হাতে তুলতে পারবেন? সব কিছুই নির্ভর করছে রবিবারের ম্যাচের উপরে। যুবভারতীতে ওড়িশাকে দু’গোলের ব্যবধানে হারাতে পারলেই সরাসরি ফাইনালে চলে যাবে মোহনবাগান। তবে ১-০ গোলে জিতলেও আশা বেঁচে থাকবে লিগ-শিল্ড জয়ীদের। সেক্ষেত্রে সেমিফাইনালের দুই পর্ব মিলিয়ে ফল ২-২ হবে। তখন অতিরিক্ত সময় খেলা হবে। তাতেও ফয়সালা না হলে টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হবে। ভুবনেশ্বরে জিতলে এত অঙ্ক করতেই হত না। হতাশ হাবাস বলেই ফেললেন, ‘‘নিজেদের উপরে চাপ আমরা নিজেরাই বাড়িয়েছি। আশা করছি, যুবভারতীতে ঘুরে দাঁড়াব।’’