চাকরি বাতিলের খবর শুনে দিশাহারা ‘সৎ রঞ্জনের’ গ্রাম, কারও ফোন বন্ধ, কারও বাড়ির দরজায় তালা

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চলাকালীনই সংবাদ-শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। তৃণমূলেরই প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস ভিডিয়ো বার্তায় ‘রঞ্জন সৎ’ নামে এক ব্যক্তির কথা জানান এবং অভিযোগ করেন, তিনি নাকি টাকার বিনিময়ে বহু চাকরি দিয়েছেন। পরে গ্রেফতার হন সেই ‘রঞ্জন’ ওরফে চন্দন মণ্ডল। সোমবার হাই কোর্টের নির্দেশে যে পঁচিশ হাজারেরও বেশি চাকরি বাতিল হয়েছে, তার মধ্যে আছেন উত্তর ২৪ পরগনায় চন্দনের গ্রামের আশপাশের এলাকার অনেকে। হাই কোর্টের রায়ের পরে মঙ্গলবার ভরা দুপুরেও যেন ‘অদ্ভুত আঁধার’ নেমে এসেছে সেই বাগদার মামাভাগিনা গ্রামে। চাকরি যাওয়া কারও ফোন বন্ধ, তো কারও বাড়ির দরজায় তালা।

এ দিন গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, কেবল মামাভাগিনা নয়, আশপাশের চড়ুইগাছি কুরুলিয়া, রামনগর-সহ গোটা বাগদা ব্লকের প্রচুর ছেলেমেয়ের চাকরি চলে গিয়েছে।চন্দনের প্রতিবেশী, স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান হারান বিশ্বাস বলছিলেন, ‘‘যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের বেশ কয়েক জন অবৈধ ভাবে চন্দনকে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন বলেই মনে হচ্ছে।’’ তবে তাঁর মতে, সকলেই অবৈধ ভাবে নিযুক্ত হননি।

মামাভাগিনা গ্রামে চাকরি যাওয়া এক যুবকের আত্মীয় এ দিন বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে এখানে যখন চাকরি বিক্রি হচ্ছিল, তখন চন্দন মণ্ডলকে টাকা দিয়ে ছেলের চাকরি হয়েছিল।’’ এ দিন পুরনো স্মৃতি উস্কে বাসিন্দারা অনেকে জানান, কয়েক বছর আগে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজনের দীর্ঘ লাইন পড়ত চন্দনের বাড়িতে। উদ্দেশ্য একটাই, ‘চন্দনের ফোঁটায়’ ভাগ্য বদলানো!

হাই কোর্টের রায়ের পরে এলাকার পরিবেশ সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। গ্রামের মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাঁরা সোমবারের
পর থেকে আর বাড়ির বাইরে বের হননি। তেমন এক যুবকের বাড়ি গিয়ে এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই জানালেন, তিনি কোনও স্কুলে চাকরি করেন না। মাঠেঘাটে কাজ করেন। পড়শি এক মহিলা বললেন, ‘‘বাগদার প্রচুর যুবক-যুবতী পথে বসলেন। কারও বিয়ে হয়েছে। কারও সন্তান হয়েছে। ঋণ নিয়ে বাড়ি করছেন কেউ কেউ। তাঁদের এ বার কী হবে?’’

যাঁরা যোগ্যতার নিরিখে চাকরি পেয়েছিলেন, হাই কোর্টের এমন রায়ে তাঁরাও অনেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, চাকরি যাওয়া এক তরুণীর কথায়, ‘‘পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলাম। এখন তো মুড়ি মিছরি এক হয়ে গেল! বাড়ির বাইরে বেরোতে লজ্জা হচ্ছে।’’

যোগ্যেরা অনেকে অবশ্য আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এলাকার বাসিন্দা সন্তোষকুমার মণ্ডলের ভাইপোর চাকরি বাতিল হয়েছে। সন্তোষ বললেন, ‘‘আমার ভাইপো নিজের যোগ্যতায়, কাউকে এক পয়সা না দিয়ে চাকরি পেয়েছিল। প্রাথমিক স্কুলের চাকরি ছেড়ে হাই স্কুলে শিক্ষকতা করছিল। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.