ভারতের পুরুষ দলে যুজবেন্দ্র চহাল যে ভূমিকা পালন করে থাকেন, মহিলা দলে সেই একই ভূমিকা নেন জেমাইমা রদ্রিগেস। সর্ব ক্ষণ হাসি-মজায় দলকে মাতিয়ে রাখছেন। থেকে থেকে ইনস্টাগ্রামে ‘রিল’ করে চমকে দিচ্ছেন। জনপ্রিয় বলিউডি গানের সঙ্গে কোমর দোলাচ্ছেন। আবার কখনও বোর্ডের ওয়েবসাইটে সঞ্চালক হিসাবে হাতে তুলে নিচ্ছেন মাইক। প্রতিটি বিদেশ সফরে সঙ্গে থাকে গিটারও। গান গাইতেও ভালবাসেন তিনি। কিন্তু আসল পরিচিতি ক্রিকেটার হিসাবেই। তাই ব্যাট হাতে বিপক্ষকে শাসন করাই প্রধান কাজ। তাই প্রয়োজনে যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলকে জেতাতে পারেন, সেটাও রবিবার প্রমাণ করে দিলেন জেমাইমা।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ দিন ভারতে হেরেও যেতে পারত। অন্তত ভারতের ইনিংসের তিন ওভার আগে পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছিল না ম্যাচ কোন দিকে গড়াবে। এক দিকে বাংলার মেয়ে রিচা ঘোষ যদি এক ওভারে তিনটি চার মেরে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়ে থাকেন, তা হলে অন্য দিকে দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে জয়ের পথ দেখালেন জেমাইমা। জঘন্য বোলিং এবং ততোধিক খারাপ ফিল্ডিংয়ের কারণে পাকিস্তানের রান দেড়শোয় পৌঁছে গিয়েছিল। ব্যাট করতে নেমে চাপে পড়েছিল ভারতও। জেমাইমার হাতে সব আশঙ্কা দূর হল।
দুই ওপেনার সেট হওয়ার মুখেই আউট হয়ে গেলেন। প্রথম উইকেটের পতনের পর নেমেছিলেন জেমাইমা। শুরু থেকে ধীরে ধীরে খেলছিলেন। কোনও রকম তাড়াহুড়ো করেননি। ঝুঁকি নেওয়ার রাস্তায় হাঁটেননি। লক্ষ্য ছিল প্রতি বলে রান করে যাওয়া। এক দিনের ক্রিকেটে তিনি মোটামুটি এ ভাবেই খেলেন। তবে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর খেলা অনেকেই বলেন ধীরগতির। কিন্তু ধীরগতির খেলাও যে প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে, রবিবারে জেমাইমার ইনিংস তার প্রমাণ।
শেফালি বর্মা এক দিকে চালিয়ে খেলার সময় জেমাইমা আর একটা দিক ধরে রাখেন। এর পর হরমনপ্রীত কৌর নামেন। তিনিও শুরু থেকে আগ্রাসী খেলার রাস্তায় হাঁটেন। তখনও জেমাইমা শান্ত ভঙ্গিতে খেলে চলেছেন। তাঁর আসল রূপ দেখা গেল রিচা নামার পর। আস্কিং রেট ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার কারণে জেমাইমাকে চালিয়ে খেলতেই হত। রিচাকে দেখে তিনিও বুকে বল পেলেন। পাকিস্তানের যে বোলাররা চাপে রেখেছিল ভারতকে, তাঁদের উপর দাপট দেখাতে শুরু করলেন জেমাইমা। পরিকল্পনা কাজে লেগে গেল। যত ম্যাচ শেষের দিকে এগোল, তত চাপে পড়ে গেল পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত হেরে বসল ম্যাচটাই।
জেমাইমার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল ঘাঁটলে একাধিক ছবি এবং ভিডিয়োয় তাঁকে গিটার হাতে দেখা যাবে। যখন ক্রিকেট খেলা থাকে না, তখন বাড়িতে বসে পড়েন গিটার নিয়ে। গান করে ইনস্টাগ্রামে রিল করেন। আবার বাসে করে খেলতে যাওয়ার আগেও তাঁকে গিটার হাতে সতীর্থদের সামনে গাইতে দেখা যায়। এ ছাড়া সতীর্থদের সঙ্গে খুনসুটি করা, নাচ করা এসব তো রয়েছেই। তবে তাঁর আসল পরিচিতি ক্রিকেট খেলেই। তাই বাকি সব কিছু পিছনে রেখে দলকে জেতানোই যে তাঁর মূল কাজ, তা রবিবার ফের মনে করালেন মুম্বইয়ের এই ক্রিকেটার।
ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে এসে জেমাইমা বললেন, “জানি না কী বলব। তবে এটা জানতাম জুটি গড়তে পারলে ম্যাচটা জেতা সম্ভব। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও আমি আর রিচা জুটি গড়েছিলাম। আজও সেটা করেছি। এই ইনিংস আমার কাছে বিশেষ, কারণ গত কয়েকটা ম্যাচে সে ভাবে রান পাইনি। তবে নির্দিষ্ট একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গিয়েছি।”
পুরস্কার বাবা-মাকে উৎসর্গ করেছেন জেমাইমা। বলেছেন, “ওঁরা স্টেডিয়ামেই রয়েছেন। এই পুরস্কার ওদেরই প্রাপ্য।” শেষ মুহূর্তের রান তাড়া করা নিয়ে জেমাইমার বক্তব্য, “প্রতি ওভারে দশ রান দরকার ছিল আমাদের। তাই একটা একটা ওভার ধরে এগোনোর পরিকল্পনা ছিল। জানতাম একটা-দুটো আলগা বল ওরা দেবেই। সেটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে ম্যাচ যে জেতা সম্ভব, এই বিশ্বাস মনের মধ্যে ছিল।”