‘উনিও তো সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ ছিলেন’! নয়া সংগঠনের নিশানায় জুনিয়র ডাক্তার আসফাকুল্লা, উত্তর কী?

অধ্যক্ষের সঙ্গে ছবি তোলা কি অপরাধ? এ বার পাল্টা প্রশ্ন জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠনের আহ্বায়ক ‘সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ’ শ্রীশ চক্রবর্তীর। শুধু তাই নয়, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধেও অতীতে সন্দীপ-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ আনলেন তিনি। দাবি করলেন, অতীতে নাকি কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আসফাকুল্লা!

ADVERTISEMENT

বিতর্কের শুরু শনিবার। সাম্প্রতিক কালে ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্ট-এর পাল্টা সংগঠন হিসাবে শনিবার আত্মপ্রকাশ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স অ্যাসোসিয়েশন। অথচ, সংগঠন হিসাবে আত্মপ্রকাশের তিন ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে ইঙ্গিত মেলে, নয়া সংগঠনের আহ্বায়কেরা অনেকেই নাকি আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ (যদিও ওই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)! সেই ছবিতে সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে নতুন সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক শ্রীশ চক্রবর্তীকে। সন্দীপ, শ্রীশ ছাড়াও ছবিতে রয়েছেন ‘থ্রেট কালচার’-এ অন্যতম অভিযুক্ত অভীক দে। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই বিতর্ক শুরু হয় নানা মহলে। সেই আবহেই এ বার শ্রীশ দাবি করলেন, অধ্যক্ষের সঙ্গে ছবি তোলা কোনও অপরাধ নয়।

শ্রীশের যুক্তি, ‘‘অধ্যক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ছবি থাকতেই পারে। সে নিয়ে যদি এত সমালোচনা করতেই হয়, তা হলে আমাদের এও জেনে রাখা দরকার যে, বর্তমান আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসফাকুল্লা নাইয়া ছিলেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের তৃণমূল ছাত্রপরিষদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক। সেই সময় হাসপাতালের সুপার ছিলেন সন্দীপ ঘোষ এবং আসফাকুল্লা সন্দীপের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই কথা কলেজের কোনও পড়ুয়া আজও অস্বীকার করতে পারবে না। এই আসফাকুল্লা নাইয়া সন্দীপ ঘোষের এত ঘনিষ্ঠ হয়েও আজ আন্দোলনের মুখ!’’ শ্রীশের আরও অভিযোগ, বিতর্ক এড়াতে সন্দীপের সঙ্গে সব ছবি আসফাকুল্লা তাঁর সমাজমাধ্যমের পাতা থেকে মুছে দিয়েছেন।

অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আসফাকুল্লা। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক হওয়া তো দূরের কথা, কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যও ছিলেন না তিনি। আসফাকুল্লা বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন আমি অতীতে কখনও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম কি না। তাঁদের স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে চাই, সাধারণ সম্পাদক হওয়া তো দূরের কথা, আমি কোনও দিনই কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আর যাঁরা জানতে চাইছেন সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল কি না, তাঁদের জানিয়ে দিই, সন্দীপবাবুর সঙ্গে কখনওই সে ভাবে পরিচয় ছিল না। কখনওই আমার সেই সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য হয়নি ওঁর সঙ্গে ছবি তোলার! যাঁরা এ সব কথা বলছেন, তাঁরা মিথ্যা বলছেন।’’ প্রসঙ্গত, আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুনিয়র ডাক্তারদের নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন গড়ে ওঠে, তার প্রথম সারিতে ছিলেন আসফাকুল্লা নাইয়া। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি হিসাবে গত ২১ অক্টোবর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও গিয়েছিলেন তিনি। এ বার তাঁর বিরুদ্ধেই পাল্টা অভিযোগ আনলেন শ্রীশ।

গত মাসেই ‘থ্রেট কালচার’-এর অভিযোগে ৫১ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করেছিল আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে গত সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে নবান্ন-বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরের দিন কলকাতা হাই কোর্ট আরজি করের ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয়। নতুন সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স অ্যাসোসিয়েশনে সেই ৫১ জনের অনেকেই রয়েছেন। অন্য দিকে, শনিবার আরজি করে ‘গণকনভেশন’-এর ডাক দিয়েছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্টের সদস্যেরা। সেই কনভেনশনেও বারবার উঠে এসেছে ‘থ্রেট কালচার’ প্রসঙ্গ। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম মুখ কিঞ্জল নন্দ, দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতোরা সকলেই কনভেনশনে ‘থ্রেট কালচার’-এর বিরুদ্ধে একে একে সরব হয়েছেন। তার মাঝেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সন্দীপের সঙ্গে শ্রীশ, অভীকদের ছবিটি। এই ছবি ফের নতুন করে উস্কে দিয়েছে ‘থ্রেট কালচার’ বিতর্ককেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.