নিভল ‘আগুন পাখি’, প্রয়াত দুই বাংলার জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক

না ফেরার দেশে সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। বাংলা সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন। সোমবার রাতে প্রয়াত হলেন ‘আগুনপাখি’র স্রষ্টা। ভারতীয় সময়ানুসারে রাত ন’টা নাগাদ রাজশাহীর বাসভবনেই মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। গত সেপ্টেম্বর মাসে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বর্ষীয়ান সাহিত্যিককে, পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না! 

বাংলাদেশের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার হাসান আজিজুল হক, তবে এই বাংলাতেও তাঁর গুণমুগ্ধের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলার (১৯৩৯ সালে) বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। শুধু শৈশব নয়, ম্যাট্রিকুলেশন পর্যন্ত এই বাংলাতে থেকেই পড়াশোনা তাঁর। এরপর ছাত্রাবস্থাতেই রাজনীতিতে যোগ দেন, পাক সেনার হাতে নির্যাতিতও হয়েছেন তিনি। পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ল থেকে দর্শন নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। ট্রেন্ডিং স্টোরিজ

ছয়ের দশকে বাংলা সাহিত্যের দুনিয়ায় আর্বিভাব তাঁর। নিয়মিত বহু পত্র-পত্রিকায় তাঁর ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘জীবন ঘষে আগুন’র মতো গ্রন্থের গল্পগুলো বোদ্ধা পাঠকের মনযোগ কেড়ে নেয়।  হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- নামহীন গোত্রহীন, পাতালে হাসপাতালে, আমরা অপেক্ষা করছি, রোদে যাবো, রাঢ়বঙ্গের গল্প। বাংলা ছোটগল্পের ‘রাজপুত্র’ উপন্যাস লেখার কাজ শুরু করেন নতুন শতাব্দীতে। তাঁর প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস নিঃসন্দেহে ‘আগুন পাখি’। রাঢ় বঙ্গের প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাস লিখেছিলেন এই কথা সাহিত্যিক, এর জন্য ২০০৮ সালে আনন্দ পুরস্কার প্রদান করা হয় তাঁকে। 

১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক সম্মানে সম্মানিত করে, এবং ২০১৯ সালে সেদেশের সর্বোচ্চ অসমারিক সম্মান, স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন হাসান আজিজুল হক। 

বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে দুই বাংলায় শোকের ছায়া। শোকবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর প্রয়াণে সাহিত্য জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি হাসান আজিজুল হকের আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.