হাঁসখালির নাবালিকাকে কি শ্মশানে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল? এমনই প্রশ্ন তুলে দিল বিজেপির পাঁচ সদস্যের তথ্য অনুসন্ধান কমিটি। সেই কমিটির অন্যতম সদস্য তথা ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মনের মধ্যে সবথেকে যে বিষয়টা আসছে, সেটা হল, মেয়েটি কি মারা গিয়েছিল নাকি তাঁকে জীবন্ত অবস্থায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল?’
শুক্রবার সকালে হাঁসখালি ‘ধর্ষণকাণ্ডে’ মৃত নাবালিকার বাড়িতে আসেন বিজেপির তথ্য অনুসন্ধান কমিটির পাঁচ সদস্য। তাঁরা নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে বলেন। বাড়ির কাছে শ্মশানেও যান। তারইমধ্যে শ্রীরূপা দাবি করেন, নাবালিকার মা জানিয়েছেন যে অভিশপ্ত রাতে মেয়ের মারাত্মকভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাঁদের বাড়ির বিছানা রক্ত ভেসে যাচ্ছিলেন। কাতরাচ্ছিলেন নাবালিকা। বলছিলেন যে ‘আর পারছি না।’ কিন্তু নাবালিকা বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাউকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শ্রীরূপা।জনপ্রিয় খবর
ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘(নাবালিকার মায়ের বিবরণ অনুযায়ী) এরকম করতে করতে যখন ভোর হয়ে আসছে, মেয়েটি কাতরাচ্ছে। মেয়ের মা বলছেন, আমি আর সেই অবস্থা সহস্য করতে পারলাম না। আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে উঠোনে বেরিয়ে আসি। প্রচুর লোক আমাদের গ্রাম, আমাদের বাড়ি ঘিরে নিয়েছে। তারপর তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, বাইরের লোকেরা এসে তাঁকে (নাবালিকাকে) একটা বাঁশে বেঁধে, একটা কাপড়ে শ্মশানে নিয়ে যায়। সেখানে মেয়েটিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কোনও ডাক্তার, কোনও চিকিৎসক দেখেননি। কোনও সরকারি আধিকারিক দেখেননি। কোনও পুলিশকর্মী দেখেননি এবং গ্রামের যাঁরা বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাঁরাও কিন্ত সেখানে পৌঁছাননি। তাই আমাদের মনের মধ্যে সবথেকে যে বিষয়টা আসছে, সেটা হল, মেয়েটি কি মারা গিয়েছিল নাকি তাঁকে জীবন্ত অবস্থায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল?’
হাঁসখালি ‘ধর্ষণকাণ্ড’
গত ৪ এপ্রিল হাঁসখালিতে নবম শ্রেণির এক নাবালিকা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছেলের আয়োজিত জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন। রাতের দিকে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেন এক মহিলা। সেইসময় অসুস্থ ছিলেন নাবালিকা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে পরদিন হয় তাঁর। কিন্তু অভিযুক্তদের চাপে ময়নাতদন্ত বা ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় বলে অভিযোগ। গত শনিবার তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন নাবালিকার পরিবারের সদস্যরা।
হাঁসখালি ‘ধর্ষণকাণ্ডে’ সিবিআই তদন্ত
মঙ্গলবারই হাঁসখালির ‘ধর্ষণকাণ্ডে’ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। চরম ভর্ৎসনার মুখে পড়েন সরকারি আইনজীবী। কেন দেরিতে মামলা দায়ের হয়েছে, তা বলতে পারেননি তিনি। কী তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, তা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলতে ব্যর্থ হন। এমনকী আদালতে পেশ করা কেস ডায়েরির সঙ্গে সরকারি আইনজীবীর দেওয়া তথ্য মেলেনি। বিচারপতি মন্তব্য করেন, যা কেস ডায়েরিতে নেই তা আদালতে বলবেন না। সেই নির্দেশ মতো ইতিমধ্যে হাঁসখালিতে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।