ধুলিয়ানে নিহত বাবা-ছেলের বাড়ি যেতে পারেন রাজ্যপাল, জেলা প্রশাসন তৈরি করল ক্ষয়ক্ষতির তালিকা

মালদহ সফর সেরে শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় পৌঁছেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার সকালে তাঁর যাওয়ার কথা শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান ইত্যাদি এলাকায়।

ধুলিয়ান পুরসভার জাফরাবাদে খুন হওয়া পিতা-পুত্রের বাড়িতে যেতে পারেন তিনি। অন্য দিকে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট চূড়ান্ত করে ফেলেছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির দাবি, রাজ্যপালের সফরের আগে ‘মুখ বাঁচাতে’ এত তড়িঘড়ি করছে শাসকদল তথা প্রশাসন। পাল্টা তৃণমূলের খোঁচা, ‘‘বাইরের কেউ পরিদর্শনে আসছেন শুনে বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে, এমন দুরবস্থা রাজ্য সরকার বা প্রশাসন কারও হয়নি।’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার আঁচে ক্ষতি হওয়া পরিবারগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। সেই কাজ এখনও চলছে। শমসেরগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কয়েক দিন আশ্রয়শিবিরে থেকে যাঁরা নিজেদের বাড়ি ফিরছেন, তাঁদের জন্য জরুরি কিছু আসবাবপত্র দিচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যপালের সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে জেলা প্রশাসন ‘অতি সক্রিয়’ হয়ে উঠেছে। মুর্শিদাবাদের জেলা বিজেপির নেতা গৌরীশঙ্কর ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘পাঁচ দিন পরে ঘরছাড়া পরিবারগুলির জন্য আলো, পাখার মতো ন্যূনতম ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। সদিচ্ছা থাকলে এগুলো আগেই করা যেত। রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার চিত্র যাতে রাজ্যপাল ধরতে না পারেন, সেই জন্য এই বন্দোবস্ত।’’ তৃণমূল অবশ্য সে কথা মানছে না। তাদের বক্তব্য, প্রশাসন তাদের কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতোই কাজ হচ্ছে। রাজ্যপালের আসাকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ তারা।

বিজেপিকে নিশানা করেছেন জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘হিংসার সময়ে এবং তার ঠিক পরে যে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তার নাম তৃণমূল। আমাদের বিধায়ক, এমনকি আমি নিজে আক্রান্ত হয়েছি। তবুও মানুষের ভাবাবেগ নিয়ে যাতে কেউ নোংরা রাজনীতি করতে না পারে, সেই কাজ করে গিয়েছি। আজ বাইরে থেকে কেউ এলাকা পরিদর্শন করবেন, আর সে জন্য আমাদের বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে, এত খারাপ অবস্থা আসেনি।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদে অশান্তিতে আড়াইশোর বেশি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। শ’খানেক দোকানে ভাঙচুর চলেছে। প্রাথমিক ভাবে যে তালিকা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে এই সংখ্যা পাওয়া গিয়েছে। পরে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। এ-ও জানা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পুরসভা, শমসেরগঞ্জ ব্লকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। শুক্রবার বিকেলে সিলিং ফ্যান, টিউব লাইট (৪০ পিসের বাক্স), সুইচ বোর্ড, সুইচ, টর্চ, বালিশ, বিছানা ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয় বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আপৎকালীন ভাবে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু জরুরি সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনাই প্রশাসনের লক্ষ্য।’’

অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে পৌঁছে গিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যেরাও। কমিশনের প্রতিনিধিদের সামনে পেয়ে তাঁদের পা জড়িয়ে ধরেন কয়েক জন মহিলা। তাঁদের আকুতি, গ্রামে স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প করা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.