একই দিনে মাঠে গোয়েন্‌কার দুই দল, শনিবার বোঝা যাবে সঞ্জীবের ফুটবলপ্রেম বেশি না ক্রিকেটপ্রেম

একটা দলের নাম লখনউ সুপার জায়ান্টস, অন্যটির নাম মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। লখনউ আর মোহনবাগান বাদ দিলে তফাত একটা ‘স’-এর। সেই ফাঁকটাই জুড়ে দিয়েছে আর একটি ‘স’। সঞ্জীব। দুই দলেরই মালিক কলকাতার শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন‌্কা। শনিবার বোঝা যাবে, দুই ‘সন্তান’-এর মধ্যে কাকে তিনি বেশি ভালবাসেন!

শনিবার দুপুর সাড়ে ৩টেয় মাঠে নামবে লখনউ সুপার জায়ান্টস। আইপিএলে ঘরের মাঠে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে খেলবে তারা। সেই ম্যাচ শেষ হতে না হতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মাঠে নামবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। আইএসএল কাপের ফাইনালে যুবভারতীতে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে খেলবে তারা। জিতলে জোড়া মুকুট বাগানের মাথায়। ক্রিকেট ও ফুটবলের এই লড়াইয়ে গোয়েন্‌কা থাকবেন কার পক্ষে? শনিবার বোঝা যাবে, গোয়েন্‌কার ক্রিকেটপ্রেম বেশি, না ফুটবলপ্রেম।

জানা গিয়েছে, শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা না বদলালে শনিবার মোহনবাগানের খেলা দেখতে যাবেন গোয়েন্‌কা। লখনউয়ের খেলায় তিনি হাজির থাকবেন না। সে কথা শুনে অনেকে বলছেন, এর থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে ক্রিকেটের থেকে ফুটবলকে বেশি ভালবাসেন তিনি। তাই ক্রিকেট ছেড়ে ফুটবল দলের খেলা দেখতে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার অনেকের মতে, লখনউ শনিবার নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলবে। তার পরে গ্রুপের আরও আটটি ম্যাচ বাকি। সেই সব ম্যাচে গোয়েন্‌কা মাঠে থাকতে পারবেন। কিন্তু শনিবার আইএসএল কাপের ফাইনাল। এই মরসুমে এটিই বাগানের শেষ ম্যাচ। ফাইনাল হওয়ার কারণেই সেই ম্যাচে মাঠে থাকবেন তিনি। মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হলে দলের সঙ্গে উল্লাসে যোগ দিতে পারবেন। আবার এও শোনা যাচ্ছে, ঘরের মাঠে ফাইনালে যদি দলের মালিক না থাকেন তা হলে বাগান সমর্থকদের কাছে খারাপ বার্তা যাবে। সেটা গোয়েন্‌কা চাইছেন না। তাই ক্রিকেট-ফুটবলের যুদ্ধে এ বার ফুটবলকে বেছে নিয়েছেন তিনি।

এ বারের আইপিএলে লখনউয়ের প্রতিটি ম্যাচে গ্যালারিতে দেখা গিয়েছে গোয়েন্‌কাকে। সে লখনউয়ের মাঠে খেলা হোক, বা বাইরে। একা নন, সপরিবার মাঠে থেকেছেন গোয়েন্‌কা। খেলার প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন। ম্যাচ শেষে মাঠে নেমে নিজের দল ও প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে খোশগল্পও করেছেন। লখনউয়ের সাজঘরে গিয়ে ক্রিকেটারদের মনোবল বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছেন। সব মিলিয়ে দলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন গোয়েন্‌কা। শুধু দল কিনেই দায়িত্ব শেষ করেননি তিনি। দলের সাফল্য, ব্যর্থতার দিকেও নজর রেখেছেন।

গোয়েন্‌কার ক্রিকেটপ্রেম কারও অজানা নয়। আইপিএলে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে নির্বাসিত করা হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও রাজস্থান রয়্যালসকে। সেই সময় দু’টি নতুন দল হয়। রাইজিং পুণে সুপার জায়ান্টস ও গুজরাত লায়ন্স। পুণের দল কিনেছিলেন গোয়েন্‌কা। প্রথম বছর তাঁর দলের অধিনায়ক ছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। পরের বছর তিনি অধিনায়ক করেন স্টিভ স্মিথকে। ২০১৭ সালের ফাইনালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে ১ রানে হারে পুণে। নইলে সে বারই প্রথম বার আইপিএল ট্রফির স্বাদ পেতেন গোয়েন্‌কা। সে বারও মাঠে দেখা যেত তাঁকে। ফলে পরবর্তী সময়ে যখন লখনউ ও গুজরাতের নতুন দল হয়, গোয়েন্‌কা পিছিয়ে থাকেননি। লখনউ কিনে নেন তিনি।

লখনউ অবশ্য এখনও পর্যন্ত গোয়েন্‌কাকে ট্রফি দিতে পারেনি। প্রথম দু’বছর প্লে-অফে উঠেছিল তারা। গত বছর প্লে-অফে উঠতে পারেনি লখনউ। দলের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে মাঠেই ধমক দিয়েছিলেন গোয়েন্‌কা। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর দলে সাফল্যই শেষ কথা। এ বার নতুন করে দল গড়েছেন তিনি। ঋষভ পন্থকে রেকর্ড ২৭ কোটি টাকায় কিনে অধিনায়ক করেছেন। আরও অনেক বদল করেছেন। দল খুব খারাপ খেলছে না। পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটি জিতেছে তারা। যে ভাবে লখনউয়ের জন্য তিনি সময় দিচ্ছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে সফল হতে মরিয়া এ রাজ্যের শিল্পপতি।

২০২০ সালে মোহনবাগানের ফুটবল দলের মালিক হয়েছিলেন গোয়েন্‌কা। তবে ক্রিকেটের মতো ফুটবলে অতটা টান তাঁর নেই। গোয়েন্‌কা নিজেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ক্রিকেট তাঁর আবেগের জায়গা। আর মোহনবাগানের ফুটবল দল কেনায় তিনি কলকাতার সঙ্গে আরও একাত্ম হতে পেরেছেন। অবশ্য ব্যবসায়িক দিকও রয়েছে। মোহনবাগান এখন ভারতের সেরা ক্লাব। গত তিন বছরে আইএসএলে তিনটি ট্রফি জিতেছে ক্লাব। দু’বার লিগ-শিল্ড। এক বার আইএসএল কাপ। তিন বছরই কাপ ফাইনালে উঠেছে সবুজ-মেরুন। শনিবার বেঙ্গালুরুকে হারাতে পারলে এই বছরে জোড়া ট্রফি ঢুকবে। তিন বছরে চারটি আইএসএল ট্রফি থাকবে গোয়েন‌্‌কার কাছে। পাশাপাশি একটি ডুরান্ড ট্রফিও জিতেছে দল। এত কম সময়ে এই সাফল্য ঈর্ষণীয়। নিশ্চয়ই যে ব্যবসায়িক দিকের কথা ভেবে গোয়েন্‌কা মোহনবাগানের ফুটবল দল কিনেছেন তা সফল।

গোয়েন্‌কাকে ফুটবল মাঠেও দেখা যায়। তবে ক্রিকেটের মতো নিয়মিত নয়। বিশেষ বিশেষ ম্যাচে মাঠে থাকেন তিনি। যেমন, ২০২৩ সালে বাগানের কাপ ফাইনালে মাঠে ছিলেন। গত বছর গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুম্বইকে হারিয়ে লিগ-শিল্ড জিতেছিল বাগান। সেই ম্যাচেও গোয়েন্‌কা ছিলেন। কাপ ফাইনালেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এ বারও যে ম্যাচে বাগান লিগ-শিল্ড জিতেছিল সেই ম্যাচে মাঠে ছিলেন গোয়েন্‌কা। তবে সাধারণত যুবভারতীতেই দেখা যায় তাঁকে। অন্য মাঠে যান না।

এ বার আবার তাঁর দুই দলে একটি পারস্পরিক সমর্থন দেখা গিয়েছে। ইডেনে কেকেআর-লখনউ ম্যাচের আগের দিন যুবভারতীতে মোহনবাগান-জামশেদপুর ম্যাচ ছিল। সেই ম্যাচ দেখতে গোয়েন্‌কার সঙ্গে হাজির ছিলেন লখনউয়ের অধিনায়ক পন্থ। আবার পরের দিন ইডেনে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন মোহনবাগানের ফুটবলার দিমিত্রি পেত্রাতোস, জেমি ম্যাকলারেন, গ্রেগ স্টুয়ার্ট, দীপক টাংরির মতো ফুটবলার। দু’টি ম্যাচই গোয়েন্‌কার দল জিতেছে। গত দু’বছর ইডেনে কেকেআরের বিরুদ্ধে সবুজ-মেরুন জার্সি পরে খেলেছিল লখনউ। মোহনবাগানের জার্সির রঙের সঙ্গে মিল রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদিও এ বার তা হয়নি। এখন দেখার গোয়েন‌্কা শনিবার কোন জার্সি পরেন, সবুজ-মেরুন, না নীল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.