ভারত ও চিনের মধ্যে এক বছর ব্যাপী লড়াইয়ের প্রভাব পড়ল পশুদের উপর। পূর্ব লাদাখে যাযাবররা পশুপালন করে। এটি বছরের পর বছর ধরে করে আসছে তারা। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে লড়াইয়ের জন্য তাদের প্রবেশের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছিল। ফলে যাযাবররা তাদের পশমিনা ছাগলদের নিয়ে সেখানে যেতে পারছিলেন না। আর তার ফলে খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে সেই সব ছাগল।
প্যানগং হ্রদের লাগোয়া বেশ কিছু অঞ্চলে স্থানীয় যাযাবরদের প্রবেশ নিষেধ। তাঁরা পর্বতের চূড়ায় পশুদের চারণ করতে নিয়ে যেতেন। এখন তা বন্ধ। তার উপর ছাগলের প্রজনন মরসুম এসেছে। এই সময় গর্ভবতী ছাগলদের অনেকটা পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রবেশাধিকার না থাকায় যাযাবররা তাদের খাদ্য়ের জন্য নিয়ে যেতে পারছে না। ফলে সেই সব ছাগলদের মৃত্যু হচ্ছে। সীমান্তের কাছাকাছি যাঁরা থাকেন তাঁদের প্রায় ৮৫ শতাংশ পূর্ব লাদাখের যাযাবর। তাঁদের জীবন পশুপাখির উপর নির্ভরশীল। তাঁদের চারণভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির অর্থনীতি কার্যত পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
পূর্ব লাদাখের চাংথাং অঞ্চলের অঞ্চল থেকে বিশ্বের সেরা পশমিনা আমদানি হয়। গত এক বছর ধরে ভারত ও চিনের যুদ্ধের জন্য এই এলাকা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। চুশুলের কাউন্সিলর কোঞ্চোক স্টানজিন বলেছেন, এই অঞ্চলে চারণ মরশুম ১৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে। তবে সীমান্ত সমস্যার কারণে যাযাবরদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে অনেক প্রাণী মারা গেছে। স্টানজিন এও বলেছেন যে প্রাণীদের মৃত্যুর সংখ্যা এখনও রেকর্ড সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এই পশমিনা ছাগলের প্রজনন মরশুমেরর জন্য প্রয়োজনীয় চাংথাং অঞ্চল। কারণ এখানেই তাদের খাবার পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে খাদ্যের অভাবে নবজাতকের মৃত্যুহারের হার বেড়েছে।
পশমিনা বাণিজ্য লাদাখের অর্থনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে। একটি পুরুষ ছাগল বছরে ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ফাইবার উৎপন্ন করতে পারে। অন্যদিকে একটি মহিলা ছাগল ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ফাইবার উৎপন্ন করে। প্রতি বছর জুনে এগুলি আঁচড়ে নেওয়া হয়। প্রতি বছর আনুমানিক ৫০ টন পশমিনা বাজারজাত হয়। এগুলি দিয়ে শাল, জ্যাকেট এবং অন্যান্য গরমের পোশাক প্রস্তুত হয়। এগুলির দাম পড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মতো।