প্রতি ইঞ্চিতে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। মেয়েদেরও উচিত নয় বেশি রাতে কলেজ থেকে বেরোনো। তাঁদেরও সাবধান হওয়া প্রয়োজন। দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ-পড়ুয়ার গণধর্ষণকাণ্ডে এমনই নিদান দিলেন দমদমের প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়
সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌগত বলেন, ‘‘দেশের অন্যান্য প্রান্তের থেকে বাংলায় মহিলাদের সুরক্ষা অনেক ভাল। কিন্তু মহিলাদেরও অত রাতে কলেজ থেকে বেরোনো উচিত নয়। পুলিশ তো সব জায়গায় থাকে না। প্রতি ইঞ্চিতে নিরাপত্তা দিতে পারে না। মহিলাদেরও সাবধান হওয়া প্রয়োজন।’’
প্রত্যাশিত ভাবেই সৌগতের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন বাংলা দেশের মধ্যে নিরাপদতম রাজ্য। আর তাঁর দলের সাংসদ বলছেন, মেয়েদের সাবধান হওয়া উচিত। দ্বিচারিতা দেখছেন রাজ্যের মানুষ।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘দুর্গাপুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলেছেন সৌগতের কথায় তাঁরই প্রতিফলন রয়েছে। এক সুরে গান না গাইলে নম্বর কাটা যেতে পারে। তাই তিনি ঝুঁকি নিতে পারেননি।’’
সম্প্রতি সৌগতের পরপর দু’টি বক্তব্য তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। প্রথমে তিনি দলের লাইন ভেঙে এসআইআর-কে সমর্থন করেছিলেন। পরে যদিও অবস্থান বদল করেন। তার পর খেলা-মেলা নিয়ে তাঁর মন্তব্যও দলকে বিড়ম্বিত করেছে। আবার দুর্গাপুরকাণ্ডে মন্তব্য করে বিতর্কের কেন্দ্রে দমদমের সাংসদ।
দুর্গাপুরকাণ্ডে ইতিমধ্যেই নির্যাতিতার অভিযোগ অনুযায়ী পাঁচ জনক গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তৃণমূলের বক্তব্য, ‘‘মহিলাদের উপর নির্যাতন সারা দেশেই হচ্ছে। শুধু বাংলায় হচ্ছে এমন নয়। কিন্তু তফাত একটাই— অন্য রাজ্যে অপরাধীরা গ্রেফতার হয় না। আর বাংলায় পুলিশ তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেয়।’’
শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ওই ঘটনা ঘটেছিল। নির্যাতিতা তরুণী ওড়িশার বাসিন্দা। রবিবার উত্তরবঙ্গ যাওয়ার আগে এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছিলেন, “বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজেরও একটা দায়িত্ব আছে তাদের স্টুডেন্টদের দেখভাল (টেক কেয়ার) করার।” মমতা আরও বলেছিলেন, “বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির উচিত পড়ুয়াদের, বিশেষত ছোট মেয়েদের রাতে বাইরে বেরোতে না-দেওয়া। তাদের নিজেদেরও সুরক্ষিত থাকতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ‘অসংবেদনশীল’ বলে সমালোচনায় মুখর হন বিরোধী দলগুলির নেতানেত্রীরা। পরে হাসিমারায় পৌঁছে মমতা দাবি করেন, তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করা হচ্ছে। সেই রেশ কাটার আগেই বিতর্ক নতুন করে উস্কে দিলেন সৌগত।