খেলা’র অজানা কথা! আন্তর্জাতিক স্তরে যাওয়ার স্বপ্ন বুকে আঁকড়ে চাষের কাজে কাঁকসার তিরন্দাজ প্রিয়াঙ্কা

প্রতিভা থাকলেও পথের কাঁটা অনটন। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। অর্থাভাবে তীরন্দাজির ধনুক সহ প্রয়োজনীয় উপকরন  কিনতেে অক্ষম। রাজ্যস্তরে সিনিয়ার বিভাগে সোনা জয় করলেও, অনটনই জাতীয়স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কাঁকসার প্রিয়াঙ্কা মুর্ম্মুর। আর অনটনে সংসারের হাল ধরতে তীর ধনুকের বদলে মাঠে ধানের চারা হাতে নিয়েছে। আদিবাসী দিবস, খেলা দিবস হলেও সরকারি সাহায্যে না পাওয়ায় আক্ষেপ পরিবারের।  

       প্রিয়াঙ্কা মুর্ম্মু। কাঁকসার বিডিও অফিস সংলগ্ন সাহেব পাড়ার বাসিন্দা। বর্তমানে বীরভুমের কুসুম্বা মুকুন্দলালা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সেখানেই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। তীরন্দাজে রাজ্যস্তরে ওপেন মিটে(জুনিয়ার) সোনা জয় করছে। কিন্তু জাতীয়স্তরে খেলার সুযোগ পেলেও ধনুকসহ প্রয়োজনীয় উপকরন না থাকায় ব্যার্থ হয়েছে। অভাবের সংসারে প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার মতো ধনুক কিনে দিতেও অক্ষম তার বাবা-মা। আক্ষেপের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা জানান, “হোস্টেলে নিয়মিত অনুশীলন করতাম। কিন্তু আমার কাছে জাতীয়স্তরে প্রতিদ্বন্দীতা করার মতো ধনুক না থাকায় একটা সময় জাতীয়স্তর অধরা থেকে যায়। ওইসব ধনুকের এক থেকে দেড় লাখ টাকা দাম। মনের মধ্যে প্রবল ইচ্ছা অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অনটন।”

প্রিয়াঙ্কা জানায়, ” রাজ্যস্তরে অনেক প্রতিযোগীতায় পদক জিতেছি। এখন বড়িতেই অনুশীলন করি। আন্তর্জাতিক স্তরে যাওয়ার স্বপ্ন এখনও বুকের মধ্যে আঁকড়ে রেখেছি। লক্ষ্য একটাই আন্তর্জাতিকস্তরে সোনা জয়।”

প্রিয়াঙ্কার বাবা সনি মুর্ম্মু ও মাা সুনিতাদেবী পেশায় দিনমজুর। যা আয় হয় কোনওভাবে সংসার চলে। সনি মুর্ম্মু ও সুনীতাদেবী জানান, “সংসারে অনটন নিত্য সঙ্গী। বহুবার মেয়ের খেলাধূলার জন্য আবেদন করেছি। সেভাবে কিছুই জোটেনি। আমাদের আশা মেয়ে একদিন আন্তর্জাতিকস্তরে সোনা জিতবে।” কিন্তু অনটনের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তীর ধনুকের বদলে হাতে তুলে নিয়েছে ধানের বীজ। বর্ষায় মা-বাবার সঙ্গে রুটিন করে মাঠে কাজে যায়।

স্থানীয় বিজেপি নেতা রমন শর্মা জানান, “রাজ্য সরকার কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন ক্লাবকে অনুদান দেয়। কিন্তু কতজন প্রতিভা তৈরী হয়েছে প্রশ্ন আছে। প্রিয়াঙ্কার মত এরকম বহু প্রতিভা আজ অর্থাভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে অংশ নিতে পারছে না। ভালে আর্চারি কিনতে পারছে না। ভালো কোচিং পাচ্ছে না।” যদিও  তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি দেবদাস বক্সি  জানান, “আদিবাসী দিবসে সম্বর্ধনা দিয়েছি। মেয়েটি কিম্বা তার পরিবার সাহায্যের জন্য আবেদন করলে অবশ্যই সরকার তার পাশে থাকবে।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.